আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নামটি শুনলেই ‘দ্য টার্মিনেটর’, ‘আই, রোবট’ বা ‘ব্লেড রানার’-এর মতো হলিউডি সিনেমার কথা মনে পড়তে পারে পাঠকের। কল্পকাহিনী আর হলিউডের বদৌলতে এআই নির্ভর রোবট প্রশ্নে বাঁকা চোখে তাকান অনেকেই। কিন্তু সেই এআই নির্ভর রোবট যদি অস্ত্র হাতে সিনেমার নায়ককে তাড়া না করে কবিতা লেখা শুরু করে বা মৌলিক শিল্প কর্ম সৃষ্টি করে, তবে কেমন হবে সেই রোবট?
Published : 28 Nov 2021, 02:43 PM
এআই বা রোবটিক্স প্রযুক্তি সাধারণত শিল্প-সংস্কৃতি আলোচনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কিন্তু সেই দৃশ্যপট যেন পাল্টে দিচ্ছে ‘আই-ডা’। কবিতা লিখতে ও ছবি আঁকতে পারে রোবটটি। রক্ত-মাংসের মানুষের সাহায্য নিয়ে ভাস্কর্য তৈরির সক্ষমতাও আছে আই-ডা’র।
‘আই-ডা’ নির্মাণ করেছেন অক্সফোর্ড, ইংল্যান্ডের বাসিন্দা আইড্যান মেলার। ‘আই-ডা’কে বলা হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম “আল্ট্রা-রিয়ালিস্টিক হিউম্যানোয়েড রোবট আর্টিস্ট”। গেল শুক্রবারেই কিংবদন্তীসম ইতালিয়ান কবি দান্তের সাতশ’তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কবিতা পড়ে শুনিয়েছে ‘আই-ডা’। আর কবিতাটি লিখেছে ‘আই-ডা’র এআই অ্যালগরিদম।
আই-ডা’র লেখা কবিতাকে “গভীরভাবে আবেগপ্রবণ” বলে আখ্যা দিয়েছেন এর নির্মাতা মেলার। দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’র প্রতিক্রিয়ায় আই-ডা লিখেছে:
"We looked up from our verses like blindfolded captives,
Sent out to seek the light; but it never came
A needle and thread would be necessary
For the completion of the picture.
To view the poor creatures, who were in misery,
That of a hawk, eyes sewn shut."
“মানুষ এবং মানুষের আচরণ নকল করতে সক্ষম আরও উন্নত এআই নির্মাণকে ঘিরে থাকা নৈতিকতা বিতর্কের উত্তর খুঁজতে আই-ডা প্রকল্পের শুরু”-- সিএনএনকে জানিয়েছেন মেলার।
আই-ডা নির্মাণ করতে গিয়ে এক চমকপ্রদ উপলব্ধি হওয়ার কথা জানিয়েছেন মেলার। রোবটটি “কতোটা মানবিক” সেটা শিখতে পারেননি মেলার এবং প্রকল্পে অংশ নেওয়া অন্যান্যরা। বরং “মানুষ হিসেবে আমরা কতোটা রোবটিক” সেই উপলব্ধি হয়েছে নির্মাতাদের।
“আই-ডা এবং এআই ব্যবহারের মাধ্যমে আমারা নিজের ব্যাপারে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শিখতে পারি। আই-ডা আমাদের সামনেই আমাদের আচরণ অনুকরণ করে আমাদের আচরণ আর অভ্যাস বিষয়ে তার গভীর উপলব্ধি জানাচ্ছে।”-- সিএনএনকে বলেছেন মেলার।
এই প্রসঙ্গে মেলার বলেন, “প্রযুক্তি ও এর অগ্রগতি নিয়ে সারা বিশ্বে এখনও যে কতো উদ্বেগ কাজ করে, ওই ঘটনা আমরাদের সেটা দেখিয়ে দিয়েছে।”
এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রশ্নে মেলার বলছেন, “প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত, এআই-কে নয়।”
আই-ডা এআই জগতে পথিকৃৎ হবে বলে আশা করছেন মেলার। আই-ডা’র তৈরি শিল্পকর্ম এবং কবিতা প্রযুক্তি অগ্রগতির সীমারেখা পাল্টে দেবে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি রোবটের চোখ দিয়ে মানবজাতি নিজেকে নতুন করে চিনবে-- এমনটাই আশা করছেন মেলার।