গত মাসেই জেনিভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি মূল নীতি নির্ধারণের চেষ্টা করেন। সেখানে তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো সাইবার আক্রমণের বাইরে” থাকা উচিৎ।
Published : 07 Jul 2021, 08:07 PM
“আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম যদি র্যাসমওয়্যার আক্রমণে আপনার তেল ক্ষেত্র থেকে আসা পাইপলাইন আক্রান্ত হয় তবে আপনার কেমন লাগবে? তিনি বললেন, এটি অবশ্যই মাথাব্যথার কারণ হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, রাশিয়া যদি এই “নীতি লঙ্ঘন” করে তবে আমেরিকা প্রতিশোধ নেবে।
গত কয়েক দিনের ঘটনা মার্কিন প্রেডিডেন্টকে সেই অগ্নিপরীক্ষায় ফেলছে বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
সোমবার ব্লুমবার্গ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি’কে (আরএনসি) সেবাদাতা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিননেক্স গত সপ্তাহে সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে।
এক বিবৃতিতে আরএনসি চিফ অফ স্টাফ রিচার্ড ওয়াল্টার্স বলেছেন, তার মনে হয় না যে হ্যাকাররা এর সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত হওয়া সাম্প্রতিক এই "সাপ্লাই চেইন" হ্যাকিং (অনেক কোম্পানিকে সেবা বা পণ্য সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং) মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বড় ধরনের সাইবার আক্রমণেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।
মুক্তিপণ দাবি
এবার র্যানসমওয়্যারটি আইটি সেবাদাতা কেসিয়া এবং এর ক্লায়েন্টদের আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রাথমিক লক্ষণগুলো ইঙ্গিত দেয়, শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ডেটা নয়ছয় করা হয়েছে এই আক্রমণে।
আক্রমণগুলি কৌশলের দিক থেকে আলাদা ছিল, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল আছে এদের মধ্যে। প্রতিটি আক্রমণই উৎস খুঁজতে গেলে গিয়ে ঠেকে রাশিয়ায়।
এবারও রাশিয়াভিত্তিক সাইবার ক্রাইম সিন্ডিকেট ‘আর-ইভিল’ শুক্রবার প্রকাশিত এই হামলার কৃতিত্ব দাবি করেছে।
হ্যাকাররা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসার তথ্য পুনরুদ্ধার করতে সাত কোটি ডলার দাবি করেছে।
সোলারউইন্ডস হ্যাকিংয়ের সঙ্গেও একই দল জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে। বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থায় আক্রমণ শানানো ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনা গত ডিসেম্বরের।
মঙ্গলবার জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, “কেসিয়া আক্রমণ সম্ভবত মার্কিন ব্যবসার ন্যূনতম ক্ষতি করেছে, কিন্তু আমরা এখনও তথ্য সংগ্রহ করছি”।
“আমাদের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
প্রতিশোধ
কিছু বিশ্লেষক অবশ্য দুটি হামলার মধ্যে পার্থক্য করেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সিলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বিশ্বাস করেন, আরএনসিকে লক্ষ্য করে যে হামলা চালানো হয়েছে তা প্রচলিত গুপ্তচরবৃত্তি।
“এটি অনেকটা ঐতিহ্যবাহী গুপ্তচরবৃত্তির মতো, যা আমরা নিজেরাও চালিয়ে যাব। এটা বন্ধ করাও আমাদের স্বার্থের পক্ষে যায় না, কারণ রাশিয়া এবং চীনের ওপর আমরা গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনা করতে চাই।”
আলপেরোভিচ বিশ্বাস করেন, কেসিয়ার উপর আর-ইভিলের আক্রমণের কাহিনি ভিন্ন - এটি আমেরিকার অনেক ব্যবসাকে আঘাত করেছে।
“এটার চরিত্র গোপনে তথ্য নেওয়া নয়, বরং বিঘ্ন ঘটানো। সারা দেশের ছোট ব্যবসাগুলি এই মুহূর্তে টিকে থাকার লড়াই করছে। এ অবস্থায় এ আক্রমণ সহ্য করা যায় না।”
জো বাইডেন যদি প্রতিশোধ নিতে চান, তবে তার কাছে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে।
টার্গেট আর-ইভিল
সাধারণত কোনো দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে। রাশিয়ার ওপরও প্রেসিডেন্ট বাইডেন সে কাজটি করতে পারেন।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আরও কিছু বিকল্প আছে। প্রথমত, তিনি নিজেই আর-ইভিলকে টার্গেট করতে পারেন।
গত বছর ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন সাইবার কমান্ড বিশ্বের বৃহত্তম বটনেট হিসাবে বর্ণিত ট্রিকবটকে শেষ করে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। লক্ষ্য ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেন এটি কোনো ঝামেলা পাকাতে না পারে।
“শেষ পর্যন্ত, যেভাবে ফল পাওয়া যায় তা হলো এই দলগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।” -- আলপেরোভিচ বলেন। “এবং আপনি কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমেই এটি করতে পারবেন। এই বিশেষ ক্ষেত্রে রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে।”
এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য সেক্ষেত্রে উপায় হবে মি. পুতিনকে বোঝানো যে র্যানসমওয়্যার গ্রুপগুলি তার স্বার্থেই বন্ধ করা উচিৎ। তবে, এটাও ঠিক, মি. বাইডেন মনে করতে পারেন যে, আলাপচারিতার সময়ে এসেছিল এবং চলেও গেছে।
জেনিভায় এত স্পষ্টভাবে বলার পর জো বাইডেন এখন মনে করতে পারেন যে, আর কথায় কাজ হবে না। তাকে কাজে নামতে হবে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতো মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি সাইবার অপারেশন রয়েছে যেটি লড়াইয়ে নিজের চেয়ে বেশি কিছু করার ক্ষমতা রাখে।
প্রশ্ন হচ্ছে মি. বাইডেন এগুলোর মধ্যে কোনটি কতটা ব্যবহার করতে পছন্দ করবেন।
আরও খবর: