সবচেয়ে বড় খবরগুলোর মধ্যে ছিল মহাকাশ ভ্রমণকে সাশ্রয়ী ও সহজ করা, যেখানে বড় পদক্ষেপ হচ্ছে স্পেসএক্স-এর তৈরি স্টারশিপ রকেট।
Published : 30 Dec 2024, 05:41 PM
লাখ লাখ মানুষের দেখা পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ, দূর্ঘটনাক্রমে হারিয়ে যাওয়া মায়া শহরের ফের আবিষ্কার থেকে শুরু করে মহাকাশ ভ্রমণকে সাশ্রয়ী করার উদ্যোগ— এ বছর রোমাঞ্চিত হওয়ার মতো অনেক কিছু দিয়েছে বিজ্ঞান।
সবচেয়ে বড় খবরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মহাকাশ ভ্রমণকে সাশ্রয়ী ও সহজ করার বিষয়ে, যেখানে ‘মানবজাতির কল্যাণে’ ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত স্পেসএক্স-এর তৈরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্টারশিপ রকেট অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘চপস্টিকস’ দিয়ে রকেট ধরা
গত অক্টোবরে টেক্সাস থেকে মঙ্গল গ্রহ ও চাঁদে মানুষ এবং মালামাল বহনের জন্য তৈরি ‘স্টারশিপ’ রকেটের পঞ্চম পরীক্ষা চালায় স্পেসএক্স। সেবারই প্রথম সফলভাবে এই রকেটের ‘সুপার হেভি বুস্টার’-কে উৎক্ষেপণ প্যাডে নিরাপদে অবতরণ করাতে পেরেছে কোম্পানিটি।
স্টারশিপের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের তরল গ্যাসের জ্বালানিচালিত রকেট। আর অপর অংশটি হল ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযান– যা এই ‘সুপার হেভি বুস্টারে’র ওপর বসানো আছে।
এটি মহাকাশে উঠে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে এর দ্বিতীয়-ধাপের স্টারশিপ রকেটটি আলাদা হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে পড়ে। আর সুপার হেভি বুস্টারটি ফিরে আসে স্পেস এক্সের সেই টাওয়ারে যেখান থেকে এটি উৎক্ষেপিত হয়েছিল।
উৎক্ষেপণ টাওয়ারের রোবোটিক হাত ‘চপস্টিক’ তখন বুস্টারটিকে ধরে ফেলে। বুস্টারটি নিরাপদে অবতরণ করার পর স্পেসএক্স-এর প্রকৌশলীরা বলেছিলেন, ‘দিনটি লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।’
আরও পড়ুন
স্পেসএক্স স্টারশিপ রকেট পরীক্ষা: নাটকীয় অবতরণে ধরা দিল বুস্টার
মাছির মস্তিষ্কের পূর্ণ মানচিত্র
এরা হাঁটতে পারে, ঘুরে বেড়াতে পারে, এমনকি সঙ্গীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রেমের গানও গাইতে পারে– এমনই এক ফলের মাছির মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা চওড়ায় এক মিলিমিটারেরও কম।
এটিকে সাত হাজার টুকরা করে কেটে তারপর স্ক্যান করেছেন গবেষকরা। এজন্য তারা একশ টেরাবাইটের বেশি ছবি স্ক্যান করতে এআই ব্যবহার করে তৈরি করেছেন এক লাখ ৩০ হাজার নিউরোন ও এদের মধ্যে পাঁচ কোটি সংযোগের এ মানচিত্র।
ফলে প্রথমবারের মতো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর মস্তিষ্কের সবচেয়ে বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। শীর্ষস্থানীয় এক মস্তিষ্ক বিশেষজ্ঞ এই অগ্রগতিকে মানুষের নিজস্ব মস্তিষ্ক বোঝার ক্ষেত্রে এক ‘বিশাল অগ্রগতি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ওই সময় গবেষকদের একজন বলেছিলেন, ‘চিন্তার প্রক্রিয়ায়' নতুন আলো ফেলবে এটি।
আরও পড়ুন
প্রথমবারের মতো তৈরি হল প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের 'মানচিত্র'
হঠাৎ করেই পাওয়া গেল হারিয়ে যাওয়া মায়া শহর
দক্ষিণ মেক্সিকোর জঙ্গলে ঢাকা কেম্প্যাচে অঞ্চলে মায়া সভ্যতার এক প্রাচীন শহরের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আর এটি সম্ভব হয়েছে লেজার-সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী লুক অল্ড-থমাস পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য মেক্সিকোর একটি সংস্থার করা লেজার জরিপে এ শহরটি দেখতে পান।
‘লাইডার’ প্রযুক্তিতে সংগ্রহ করা পুরোনো ডেটা নতুন করে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ১২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছবিতে শনাক্ত হয়েছে মায়াদের প্রায় ৬ হাজার ৪৭৯টি স্থাপনা।
এ হারিয়ে যাওয়া শহরটিকে মেক্সিকোর এক উপহ্রদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘ভ্যালেরিয়ানা’ নামে বর্ণনা করেছেন গবেষকরা।
লাইডার-এর ছবিতে দেখা গেছে, মায়াদের মন্দিরের মঞ্চ, উঠান, ঘরবাড়ি, কৃষিকাজের যন্ত্র, এমনকি বাঁধের মতো নানা কাঠামো। মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট বলেছে, এসব কাঠামো ৭৫০ থেকে ৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি ও ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার লোকের আবাসস্থল হতে পারে এটি।
আরও পড়ুন
লেজার-সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহারে মিলল প্রাচীন মায়া নগরের খোঁজ
প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে এনেছে সংরক্ষণ ব্যবস্থা
মানুষের কার্যকলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতি হচ্ছে, যেটিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেছে সুইস ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ’।
দশ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমিয়ে আনতে কার্যকর হতে পারে এগুলোর সংরক্ষণ কার্যক্রম।
কয়েক ডজন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশ ও মহাসাগরের ৬৬৫টি সংরক্ষণ ব্যবস্থার পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, যেখানে প্রতি তিনটি ক্ষেত্রে দুটিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সংরক্ষণ কার্যক্রম ব্যবস্থা।
গবেষণার লেখকরা বলেছেন, হুমকির মুখে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষায় কাজ করা মানুষদের জন্য ‘আশার আলো’ হতে পারে তাদের এসব অনুসন্ধান।
যে সূর্যগ্রহণ হতবাক করে দিয়েছিল লাখ লাখ মানুষকে
মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে আক্ষরিক অর্থেই হওয়া এক পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
মোটামুটি প্রতি ১৮ মাসে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটে। চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দিতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সে দৃশ্য প্রথম দেখতে মেক্সিকোর মাজাতলান শহরে ভিড় করেছে মানুষ। ৪৫ মিনিটের মধ্যে শহরটিতে আংশিক সূর্যগ্রহণ পরিণত হয়েছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণে।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে এই সূর্যগ্রহণ ঘটার কারণে এ এক বিরল ঘটনা। ৩ কোটি ১৬ লাখ মানুষ এই সূর্যগ্রহণ দেখেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
আরও পড়ুন