প্রাইভেসির জন্য এনক্রিপশন পরিষেবা দিয়ে থাকে এমন বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্যে অন্যতম অ্যাপ সিগনাল।
Published : 10 Feb 2025, 04:46 PM
অনেকেই জীবনের বেশিরভাগ সময় অনলাইনে কাটান। আলাপচারিতা বা ইন্টারনেট সার্চে কারা প্রবেশ পেতে পারে তা বোঝা ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে কীভাবে প্রাইভেসি ধরে রাখা যায় তা বোঝাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এরইমধ্যে বেশকিছু চ্যাটিং অ্যাপ বা টুল চালু রয়েছে বাজারে। যার মধ্যে অন্যতম সহজ টুল হচ্ছে সিগনাল।
এটি এক ধরনের ডিজিটাল টুল, যা কেবল সাংবাদিকদের সঙ্গে নিরাপদ আলাপচারিতা চালিয়ে যেতেই নয়, বরং বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদদমাধ্যম সিএনএন।
ব্যক্তিগত ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন
ব্যবহারকারীরা ধরে নিতে পারেন, অফিসের কম্পিউটার বা ফোনে আপনি যা কিছু করছেন বা দেখছেন তা কর্তৃপক্ষ দেখতে পারেন। কারণ অফিসের মালিকানাধীন ডিভাইসের ব্যবহার দেখার অধিকার তাদের রয়েছে।
“আপনার যদি মনে হয়, কেউ এসব আলাপচারিতার মাধ্যমে ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে তাহলে এসব চ্যাটিংয়ে কার প্রবেশাধিকার আছে তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে,” বলেছেন এসিএলইউ-এর স্পিচ, প্রাইভেসি ও টেকনোলজি প্রজেক্টের জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ ড্যানিয়েল খান গিলমোর।
এ বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও গুগল সার্চের জন্য নিজের ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়টি ভালো উপায় হতে পারে। অফিসের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছেন গিলমোর।
তিনি বলেছেন, “অফিসের ওয়াই ফাই ব্যবহারের ফলে আপনি কোন চা পান করছেন তা হয়তো দেখতে পাবে না কর্তৃপক্ষ। তবে আপনি এটি কার কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তা দেখতে পাবে অফিস।”
সিগনাল
আইমেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপ’সহ প্রাইভেসির জন্য এনক্রিপশন পরিষেবা দিয়ে থাকে এমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তবে ডেটা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্যে অন্যতম অ্যাপ হতে পারে সিগনাল।
টেক্সটিং ও ফোন কল করার জন্য প্রচলিত মেসেজিং অ্যাপের মতোই দেখায় সিগনাল’কে। তবে এটি এক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, কোনও বেসরকারি কোম্পানির নয় এবং ডিফল্টভাবেই অ্যাপটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করা। তাই আলাপচারিতায় অংশগ্রহণকারীরা ছাড়া অন্য কেউ তা দেখতে পারে না।
‘ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন’-এর সাইবার নিরাপত্তা পরিচালক ইভা গ্যালপেরিন বলেছেন, “আপনি যদি আদালতের আদেশ নিয়ে তাদের অফিসে হাজির হন, তারপরও আপনার সম্পর্কে তেমন কিছুই তারা দিতে পারবে না।
“তবে অন্যান্য নন-এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপের কাছে সমন জারির মাধ্যমে অফিস কর্তৃপক্ষ বা কোনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্লাটফর্মটিকে তাদের ব্যবহারকারীর আলাপচারিতা পাঠাতে বাধ্য করতে পারে।”
সিগনাল বা হোয়াটসঅ্যাপ যে অ্যাপই ব্যবহার করুন না কেন ব্যবহারকারীদের ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ’ ফিচারটি চালুর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিজেদের আলাপচারিতা মুছে ফেলতে পারেন তারা।
টর ব্রাউজার
অনেকেই ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানেন, যা ডিভাইস ও ইন্টারনেটের মধ্যে একটি টানেলের মতো কাজ করে। ফলে ইন্টারনেট ট্রাফিক কোথা থেকে আসছে তা বের করা যায় না।
ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্য আরও ব্যক্তিগত উপায় হতে পারে ভিপিএন। এরপরও ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট ট্রাফিক সম্পর্কে তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা অন্য কাউকে পাঠাতে বাধ্য হতে পারে কোম্পানিটি।
“ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সব ট্রাফিক দেখতে পারে প্লাটফর্মটি, বিশেষ করে আপনি কোথায় আছেন ও কোথায় যাচ্ছেন এমন সব তথ্যই দেখতে পারে তারা,” বলেছেন গ্যালপেরিন।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প হচ্ছে টর ব্রাউজারের ব্যবহার। এটি এমন এক ব্রাউজার যা ফায়ারফক্স বা সাফারি’র মতোই ডাউনলোড করতে পারেন ব্যবহারকারীরা। তবে এটি বিভিন্ন ‘নোড’ বা কম্পিউটারের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে নেটওয়ার্ক জুড়ে ইন্টারনেট ট্রাফিক পাঠায়, যাতে কোনও ব্যবহারকারীর ট্রাফিক কোনও একক প্রবেশাধিকার পয়েন্ট থেকে প্রবেশ করানো না যায়।
অন্যান্য বিষয়
তথ্য ফাঁসকারী কর্মীদের শনাক্তের জন্য এরইমধ্যে কয়েকটি আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে কিছু কোম্পানি, যেমন ওয়াটারমার্কিং বা ইমেইল পরিবর্তনের মতো বিষয়। যাতে কর্মীরা একই বার্তা বা টেক্সটের কিছুটা ভিন্ন সংস্করণ দেখতে পান।
এ কারণে ইমেইল বা নথির হুবহু কপি বা ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি প্রিন্টেড যে কোনও নথিতে ‘প্রিন্টার বিন্দু’ অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন। এটি এমন এক অদৃশ্য ট্র্যাকিং কোড যা সময়, তারিখ ও অবস্থান নির্দেশ করতে পারে যে, এখানে কিছু প্রিন্ট হয়েছিল।
আর আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনও অপ্রকাশ্য চুক্তি লঙ্ঘন বা গোপনীয় তথ্য শেয়ার করা বেআইনি। তাই এ ধরনের কাজে চিহ্নিত করা গেলে আইনী ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন আপনি।
গিলমোর বলেছেন, সহকর্মী বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যক্তিগত বিভিন্ন মাধ্যম চিহ্নিত করা গেলে তা একটি ভাল ধারণা হতে পারে।
“কারণ, মানুষের প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টি দলগতভাবেই আমাদের করতে হবে।”