তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা মানুষের ডেটা থেকে প্রশিক্ষিত হয় না, কোম্পানিগুলোর এমন দাবির কোনো সত্যতা নেই।
Published : 01 Dec 2023, 01:16 PM
ওপেনএআই সম্ভবত এমন এক ‘বিপজ্জনক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা’ উদ্ভাবন করেছে, যা নিয়ে কোম্পানির মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে --এমনই দাবি করেছেন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় টালমাটাল সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআই, যেখানে কোম্পানির সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানকে ছাঁটাই করে পুনরায় নিজ পদে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।
তবে, অল্টম্যানকে কেন ছাঁটাই করা হল সে রহস্য এখনও খোলাসা করা হয়নি।
ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক বলেন, কোম্পানি সম্ভবত এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে, যা মানবতার অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
কোম্পানির সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে বেশ কয়েকবার সমালোচনা করতে দেখা গেছে মাস্ককে। এর মধ্যে রয়েছে ওপেনএআইকে অলাভজনক থেকে ব্যবসায়ে রূপান্তর ও নিজেদের কাজকে ওপেন সোর্স হিসেবে না রাখার বিষয়টিও।
মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ডিলবুক’ সম্মেলনে মাস্ক বলেন, তিনি ওপেনএআইয়ের পর্দার আড়ালের খবর জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এর জন্য তিনি ওপেনএআইয়ের প্রধান বিজ্ঞানী ইলিয়া সুটস্কেভার’সহ কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে পারেননি তিনি।
তবে মাস্ক ইঙ্গিত দিয়েছেন, কোম্পানি ‘এমন বিপজ্জনক কিছু’ উদ্ভাবন করেছে, যা সুটস্কেভারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রেক্ষাপট হতে পারে এমন কোনো যুগান্তকারী উদ্ভাবন, যার সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কোম্পানিটি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্ড্রু রস সরকিন মাস্ককে জিজ্ঞেস করেন, ‘কোম্পানির মধ্যে বিপজ্জনক কিছু’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন। এর জবাবে মাস্ক বলেন, এটা কেবল তার অনুমান।
একই সাক্ষাৎকারে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার সময় ওপেন সোর্স ও অলাভজনক কোম্পানি হওয়ার নীতিমালা থেকে সরে আসার বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা করেন মাস্ক।
তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা মানুষের ডেটা থেকে প্রশিক্ষিত হয় না, কোম্পানিগুলোর এমন দাবির কোনো সত্যতা নেই। আর ‘ডিজিটাল গড’ না আসার আগে কোনো আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এ অভিযোগের সুরাহা করাও সম্ভব হবে না।
এর আগে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ইহুদিবিরোধী কনটেন্ট রাখার অভিযোগে যেসব বিজ্ঞাপনদাতা প্ল্যাটফর্মটি ছেড়ে চলে যান তাদের উদ্দেশ্যে মাস্ক এক পোস্টে বলেন, “গো ** ইয়োরসেলফ’।
এমন আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার নিয়ে অনুশোচনা প্রকাশ করে ওই সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, “১৫ নভেম্বর এক্স-এ এক ইহুদিবিদ্বেষী পোস্টের সঙ্গে একমত পোষণ করায় আমি দুঃখিত।”
১৫ নভেম্বরের ওই পোস্টে একমত পোষণ করার পর থেকে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে মাস্কের ওপর দিয়ে। এতে দাবি করা হয়, ইহুদিরা শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিদের ঘৃণা করে। ওই ব্যবহারকারীর বক্তব্যকে ‘আসল সত্য’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মাস্ক। আর এ তত্ত্বকে ‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
বুধবার মাস্ক বলেন, এ বক্তব্যে একমত পোষণ করে তিনি সমালোচকদের হাতে ‘গুলিভর্তি বন্দুক ধরিয়ে দিয়েছেন’। এ ছাড়া, নিজের বক্তব্যকে ‘বোকামী’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
‘গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ তত্ত্বের মূল ভাবধারা হল, ইহুদি ও বামপন্থী ব্যক্তিরা এমন পরিকল্পনা করছেন, যেখানে অন্যান্য বর্ণের জনগোষ্ঠী শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও তাদের সংস্কৃতিকে নির্মূল করবে, যা পরবর্তীতে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’র রূপ নেবে।
মাস্কের এমন আচরণ নিয়ে হোয়াইট হাউজ নিন্দা জানানোর পাশাপাশি একে ‘ইহুদি বিদ্বেষী ও বর্ণবাদী ঘৃণার প্রচার’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
মাস্কের পোস্টের পর এক্স থেকে নিজেদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলে বিনোদন জায়ান্ট ওয়াল্ট ডিজনি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, ডিসকভারি ও এনবিসিইউনিভার্সালের মালিক কোম্পানি কমকাস্ট।
আর এর পেছনে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে ইহুদীপন্থী সংগঠন মিডিয়া ম্যাটার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন। এতে উল্লেখ করে হয়, বিভিন্ন নাৎসি সমর্থক কনটেন্টের পাশে কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন দেখা গেছে।
এর বিপরীতে, গত সপ্তাহে মিডিয়া ম্যাটার্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে এক্স।