যখন একাধিক নিউক্লিয়াস পারমাণবিক ফিউশন ঘটানোর মতো যথেষ্ট কাছাকাছি চলে আসে, তখন বিভিন্ন নিউক্লিয়ন এক নিউক্লিয়াস থেকে আরেক নিউক্লিয়াসে স্থানান্তরিত হতে পারে।
Published : 19 Jun 2024, 05:05 PM
নিউক্লিয়াস লেনদেন কীভাবে পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে, সম্প্রতি সে রহস্য উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে, ‘নিউক্লিয়ন’ হচ্ছে প্রোটন অথবা নিউট্রন, যা দিয়ে কোনো পারমাণুর নিউক্লিয়াস তৈরি হয়।
স্বল্প-শক্তির ও নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়াকে দেখা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের উৎস হিসাবে। তারা বা নক্ষত্রের ক্ষেত্রে, কার্বন ও অক্সিজেনের জ্বলন্ত অবস্থায় এ ধরনের বিক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার প্রভাব আছে নাক্ষত্রিক বিবর্তনের বেলাতেও।
এমনকি বিভিন্ন নিউট্রন তারার ভেতরের স্তর যখন পদার্থ সংগ্রহ করতে থাকে, সে রোমাঞ্চকর পদ্ধতির ধারণাও উঠে এসেছে এ গবেষণায়।
তবে এ ধরনের বিক্রিয়ার সঠিক গতিশীলতা সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর একটি বড় কারণ— কীভাবে বিভিন্ন নিউক্লিয়নের মধ্যে থাকা প্রোটন ও নিউট্রন দুটি ফিউজিং নিউক্লিয়াসের মধ্যে চলাফেরা করে, সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার ধারণা না থাকা।
পারমাণবিক নিউক্লিয়াস হচ্ছে পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন মিলে আঁটসাঁট হয়ে থাকা একটি গোলক।
যখন একাধিক নিউক্লিয়াস পারমাণবিক ফিউশন ঘটানোর মতো যথেষ্ট কাছাকাছি চলে আসে, তখন বিভিন্ন নিউক্লিয়ন এক নিউক্লিয়াস থেকে আরেক নিউক্লিয়াসে স্থানান্তরিত হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এই স্থানান্তরের কারণে সম্ভবত ফিউশন প্রক্রিয়াও আগের চেয়ে সহজ হয়ে যায়।
এদিকে, ‘আইসোস্পিন কম্পোজিশন’ অর্থাৎ প্রোটনকে নিউট্রন থেকে আলাদা করার ঘটনা কীভাবে স্বল্প-শক্তির ফিউশন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
এর পাশাপাশি, বিভিন্ন নিউক্লিয়াস ফিউশনের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আইসোস্পিন কনফিগারেশনের ঘটনাটি পরীক্ষা করতে এ গবেষণায় বেশ কিছু উন্নত গণনামূলক কৌশল ও তাত্ত্বিক মডেল ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
ফিউশন বিক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে ‘আইসোস্পিন’-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেছে এ গবেষণার ফলাফল, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ সি’-তে।
এই গবেষণায়, আইসোস্পিনের গতি বিভিন্ন ধরনের আইসোটোপ থাকা অবস্থায় কম শক্তির নিউক্লিয়ার ফিউশনে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা বুঝতে উচ্চ-সক্ষমতাওয়ালা কম্পিউটার ও তাত্ত্বিক মডেল ব্যবহার করেছেন ‘ফিস্ক ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা। এমনকি এ ধরনের বিক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের প্রভাব দেখতে কেমন, সেটিও ঘেঁটে দেখেন তারা।
যেসব পারমাণবিক সিস্টেমে নিউক্লিয়াস অসম, সেখানে ‘আইসোস্পিন’ গতিবিদ্যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমনকি ফিউশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাধা, বিশেষ করে নিউট্রনে সমৃদ্ধ সিস্টেমগুলোর বেলায়, সেটিও অনেক সময় কমিয়ে আনে এটি। এই ঘটনা দেখা যায় বিশেষ ধরনের গবেষণা কেন্দ্রগুলো থেকে, যেখানে অদ্ভুত ও অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াসের আলোচ্ছটা তৈরির নজিরও মিলেছে।
এমনকি এইসব বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন মৌলিক পারমাণবিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল। আর এ ধারণাটির বিস্তৃত প্রভাব থাকতে পারে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা এমনকি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিভিন্ন ফিউশনভিত্তিক শক্তির ক্ষেত্রেও।