ঘাস, বরফ, ভেজা কাঁচের ওপর দিয়ে লাফিয়ে উঠতে ও চলমান ড্রোনে নিরাপদে অবতরণও করতে পারে এই নতুন রোবট।
Published : 13 Apr 2025, 04:32 PM
ছোট হলেও শক্তিশালী এক রোবট তৈরি করেছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, পোকামাকড়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে রুক্ষ ও পিচ্ছিল পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারবে এটি।
ক্ষুদ্র রোবটটি তৈরি করেছেন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ বা এমআইটি-র একদল গবেষক, যেটি মানুষের বুড়ো আঙুলের চেয়েও ছোট এবং পেপারক্লিপের চেয়েও কম ওজনের।
বেশি উচ্চতার কোনো কিছুর ওপর এটি সহজেই লাফিয়ে উঠতে ও নিজের ওজনের দশগুণ পর্যন্ত বোঝা বহন করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা বলছেন, প্রচলিত উড়ুক্কু রোবটের চেয়ে অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে ভূমিকম্পের পর ধসে পড়া বিভিন্ন ভবন অনুসন্ধানের মতো বাস্তব জীবনের উদ্ধার মিশনে সহায়তা করতে পারে নতুন রোবট।
ছোট আকারের রোবট এমন জায়গায় দরকারি, যেখানে মানুষ বা বড় মেশিন পৌঁছানোর জন্য খুব বিপজ্জনক বা সংকীর্ণ। তবে প্রচলিত বেশিরভাগ ক্ষুদ্র রোবট হামাগুড়ি না হয় উড়ে সেখানে যায়। তবে দীর্ঘ বড় বাধা বা পিচ্ছিল ঢালের মুখোমুখি হলে এসব রোবট প্রায়শই আটকে যায়।
অন্যদিকে, এমআইটি দলটির তৈরি এ রোবটটি বাতাসে নিজেকে ওড়ানোর জন্য একটি স্প্রিংওয়ালা পা ব্যবহার করে কাজ করে এবং এতে চারটি ছোট ডানার মতো অংশ রয়েছে, যা রোবটটিকে এর ভারসাম্য বজায় রেখে সঠিক দিকে চলতে সহায়তা করে।
গবেষণা দলটি বলেছে, এসব ডানা রোবটটিকে ওড়ায় না বরং বাতাসে ভাসমান অবস্থায় এটিকে পথ দেখাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
এমআইটি’র দাবি, রোবটটি প্রায় ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে লাফ দিতে পারে— যা এর নিজের উচ্চতার চারগুণ বেশি এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে এটি। ঘাস, বরফ, ভেজা কাঁচের ওপর দিয়ে লাফিয়ে উঠতে ও চলমান ড্রোনে নিরাপদে অবতরণও করতে পারে এই নতুন রোবট।
এটিকে বিশেষ করে তুলেছে এর শক্তিসক্ষমতা, যেটি একই আকারের প্রচলিত উড়ুক্কু রোবটের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কম শক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে পারে। এর স্প্রিংওয়ালা পায়ের কারণে এমন সহজভাবে কাজ করতে পারে এই রোবট।
রোবটটি অবতরণের সময় এর স্প্রিংটি খানিকটা পেছনের দিকে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে এবং আবার বাতাসে ঠেলে দেওয়ার জন্য এ স্প্রিং ব্যবহার করে এটি। রোবটের বিভিন্ন উইং মডিউল যে কোনও শক্তির ক্ষতি পূরণ করতে ও এটিকে সোজা রাখতে সহায়তা করে।
রোবটটির ঝাপটানো এসব ডানা নরম ও পেশীজাতীয় উপাদানের মাধ্যমে চলে, যা বিরতি ছাড়াই বারবার ওঠানামা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। রোবটটিকে সব ধরনের পরীক্ষায় ব্যবহারের সময় গবেষকদের কোনোরকম সার্ভিসিং বা সারাইয়ের প্রয়োজন হয়নি।
প্রতিটি লাফের সময় কীভাবে চলতে হয় তা জানতে সহায়তা করেছে এতে থাকা একটি স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম। এর বাইরে থাকা গতি সেন্সর ব্যবহার করে রোবটটি কোথায় অবতরণ করবে তা নির্ধারণ করে তারপরে পরবর্তী লাফের জন্য প্রস্তুত হতে নিজের এসব ডানাকে সামঞ্জস্য করে রোবটটি।
গবেষকরা বলছেন, খুব টেকসই ও অভিযোজিত বলে প্রমাণিত হয়েছে রোবটটি। সহজেই এক পৃষ্ঠ থেকে অন্য পৃষ্ঠে যেতে পারে এটি। যেমন– ঘাস থেকে ভেজা কাঁচে।
গবেষকরা বলছেন, রোবটটির কার্যকর লাফানোর ধরনের কারণে এটি ভারী বোঝা বহন করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি এর দ্বিগুণ ওজন বহন করেছে ও এর আরও বেশি ওজন বহন করার সম্ভাবনাও রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় সীমা ওজন নয়, বরং স্প্রিং কতটা কার্যকর সে বিষয়টি।