গেইমটির মূল আকর্ষণ প্রয়াত ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেন, যিনি ৯০’র দশকে কুয়েত আক্রমণ ও দখল করে নিয়েছিলেন।
Published : 24 Oct 2024, 04:34 PM
‘কল অফ ডিউটি: ব্ল্যাক অপস ৬’ গেইম প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কুয়েত।
গেইমটির মূল আকর্ষণ প্রয়াত ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেন, যিনি ৯০’র দশকে কুয়েত আক্রমণ ও দখল করে নিয়েছিলেন। সে সময় ঘটে যাওয়া গালফ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি গেইমটি। ফলে, এ গেইম প্রকাশের অনুমতি দেয়নি মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশটি।
শুক্রবার গোটা বিশ্বে প্রকাশ পেতে যাওয়া গেইমটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি অবশ্য জনসমক্ষে স্বীকার করেনি কুয়েত। তবে, এমনটি ঘটার সম্ভাব্য কারণ হল, ওই প্রেক্ষাপটের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে এখনও লড়াই করছে দেশটি। আর ভিডিও গেইমে সাধারণত নির্মাতারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলো আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
ফার্স্ট পার্সন শুটার ঘরানার এ গেইমে তৎকালীন সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে অপারেশন চালানোর প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে।
এর গেইম-প্লে ট্রেইলারে কয়েকটি পুড়তে থাকা তেলের খনি দেখা গেছে, যা কুয়েতের সেইসব নাগরিকের জন্য খুবই বেদনাদায়ক, যারা ওই যুদ্ধ দেখেছেন। তাদের চোখের সামনে ইরাকের সামরিক বাহিনীর লাগানো আগুনে তেলের খনি জ্বলেছে। ফলে, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছিল দেশটি। এমনকি ইরাকি সামরিক বাহিনী তখন সাতশর বেশি তেল কুপ ধ্বংস করেছে বা সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়া, গেইমটি উন্মোচনের আগে প্রকাশ করা ফুটেজে সাদ্দাম হুসেইন ও ইরাকের পুরোনো তিন-তারার পতাকাও দেখা গেছে। গেইমের মাল্টিপ্লেয়ার মোড, যা এ সিরিজের জনপ্রিয় এক ফিচার, তাতে কুয়েতের মরুভূমি অঞ্চলে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। এ ঘটনার আগে সাদ্দাম এ যুদ্ধে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছিলেন। আর এ মোডে আরেকটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটও খেলা যাবে, যা ঘটেছিল ইরাকের প্রাচীন শহর ব্যাবিলনে।
গেইমটির নির্মাতা অ্যাক্টিভিশন এক বিবৃতিতে কুয়েতে ‘গেইমের উন্মোচনে নিষেধাজ্ঞা জারির’ কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
“কুয়েতের সকল প্রি-অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে, আর এর পুরো ভর্তুকিও মিলবে,” বলেছে কোম্পানিটি।
“আমরা আশাবাদী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে ও কুয়েতে থাকা গেইমারদের ব্ল্যাক অপস সিরিজের নতুন এ অভিজ্ঞতা পাওয়ার সুযোগ দেবে।”
এ সিদ্ধান্ত নিয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি কুয়েতের তথ্য মন্ত্রণালয়।
ফার্স্ট-পারসন শুটার গেইম হিসেবে কল অফ ডিউটি’র প্রথম সংস্করণ এসেছিল ২০০৩ সালে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি। তবে এখন মাইক্রোসফট মালিকানাধীন গেইমটি এমন এক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যার দাম কয়েকশ কোটি ডলার।
তবে, এর গেইম-প্লে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরায় এটি নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, চীন ও রাশিয়া উভয় দেশেই নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে ফ্রাঞ্চাইজটি। ২০০৯ সালে গেইমটির এক সংস্করণে গেইমাররা রাশিয়ার এয়ারপোর্টে এমন জঙ্গি আক্রমণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখানে তারা সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করতে পারতেন।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপট নিয়ে কাজ করায় অন্যান্য বেশ কিছু গেইম প্রশংসাও কুড়িয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, গত বছর প্রকাশ পাওয়া ‘অ্যাসাসিনস ক্রিড: মিরাজ’ গেইমটিকে। এতে নবম শতকে ইসলামের স্বর্ণযুগ চলাকালীন বাগদাদ শহরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছিল।