এ নতুন সিস্টেমটি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি রাজপথকে আরও নিরাপদ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
Published : 30 Jun 2024, 04:50 PM
এবার চেহারা দেখেই মদ্যপ বা মাতাল চালকদের শনাক্ত করবে নতুন এক ধরনের ক্যামেরা প্রযুক্তি– এমনই দাবি করেছেন এর নির্মাতারা।
এ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিকাশে কাজ করছেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ‘এডিথ কোয়ান ইউনিভার্সিটি (ইসিইউ)’র গবেষকরা, যেখানে ক্যামেরা ফুটেজ ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে শুরু করার আগেই চালক মদ্যপ কি না তা শনাক্ত করা যাবে।
এ নতুন সিস্টেমটি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি রাজপথকে আরও নিরাপদ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
সেই লক্ষ্যে, সফটওয়্যার কোম্পানি ‘মিক্স বাই পাওয়ারফ্লিট’-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে গবেষণা দলটি, যেখানে তারা একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ড্রাইভারদের ডেটা সংগ্রহ করেছেন।
এক্ষেত্রে গবেষকরা যেসব ড্রাইভারের ভিডিও রেকর্ড করেছেন, তাদের মদ্যপান করার তিনটি ভিন্ন স্তর দেখা গেছে। সেগুলো হল, ‘সোবার’ বা মাতাল নন, কিছুটা ভারসাম্যহীন ও একেবারেই মাতাল।
এজন্য ড্রাইভাররা এক ধরনের সিমুলেটর ব্যবহার করেছিলেন, যার মাধ্যমে গাড়ি চালানোর সময় তাদের বাস্তবিক আচরণ ধারণ করার সুযোগ পেয়েছেন গবেষকরা।
আর চালকের চেহারার ‘স্ট্যান্ডার্ড আরজিবি (রেড, গ্রিন, ব্লু) ভিডিও’ বিশ্লেষণের জন্য তারা একটি মেশিন লার্নিং সিস্টেম ব্যবহার করেছেন।
সিস্টেমটি অ্যালকোহল সংশ্লিষ্ট দুর্বলতার বিভিন্ন নির্দিষ্ট লক্ষণ যেমন মুখের অভিব্যক্তি, চোখের দিকনির্দেশনা ও মাথার অবস্থানের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছে।
এর ফলাফল বেশ সন্তোষজনক ছিল, যেখানে সিস্টেমটি ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন স্তরের মদ্যপ অবস্থা নির্ভুলভাবে শনাক্ত করেছে।
পিএইচডি শিক্ষার্থী এনসিয়েহ কেসথাকরানের ব্যাখ্যা অনুসারে, সিস্টেমটি কেবল ড্রাইভার মনিটরিং সিস্টেমওয়ালা গাড়িতেই নয়, বরং স্মার্টফোনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর মানে, মদ্যপ চালকের যাত্রা শুরু করার আগেই তা ঠেকিয়ে দিতে পারে এ পদ্ধতি, যেখানে অন্যান্য পদ্ধতির বেলায় চালকের মাতাল অবস্থা শনাক্ত করতে তাদের গাড়ি চালানোর গতিবিধি কিছু সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। বিষয়টি একেবারে শুরুতেই শনাক্ত করে ফেলে নতুন সিস্টেমটি।
ইসিইউ'র জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. সাইয়েদ জুলকারনাইন জিলানির মতে, এটিই প্রথম প্রযুক্তি, যা চেহারার অভিব্যক্তির ভিত্তিতে অ্যালকোহলের মাত্রা শনাক্ত করতে একটি সাধারণ আরজিবি ক্যামেরা ব্যবহার করেছে।
এর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ছবির রেজুলিউশন নির্ধারণ করা। আর এক্ষেত্রে যদি কম রেজুলিউশনের ভিডিও পর্যাপ্ত হয়, তবে রাস্তার পাশে থাকা নজরদারি ক্যামেরাগুলোতেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে রাস্তায় বিপজ্জনক কিছু ঘটার আগেই মদ্যপ চালক শনাক্ত করতে পারবেন আইন প্রয়োগকারীরা।
এ প্রযুক্তি রাস্তার বিভিন্ন ক্যামেরায় একীভূত করা যেতে পারে, অনেকটা সিটবেল্ট ব্যবহার বা মোবাইল ফোনের গতিবিধি শনাক্ত করার মতো। এর মানে, বিশেষ কোনো ‘ইন-কেবিন’ যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া, ড্রাইভারের চেহারার ৩ডি ও ইনফ্রারেড ভিডিও, গাড়ির স্টিয়ারিং ব্যবহার করার সময় ড্রাইভারের গতিবিধির আরজিবি ভিডিও, তার ড্রাইভিং সিম্যুলেশনের তথ্য এমনকি গাড়ি চালানোর সময় তার আচরণের স্ক্রিন রেকর্ডিং দেখানোর মতো সুবিধাও রয়েছে নতুন এ সিস্টেমে।