বরফের পুরু খোলসে ঢাকা বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর নিচে থাকতে পারে এক বিশাল সমুদ্র, যেখানে রয়েছে উষ্ণ ও পুষ্টিতে পূর্ণ এমন এক পরিবেশ।
Published : 17 Oct 2024, 03:45 PM
আকারের দিক থেকে আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। আর এর রয়েছে ১০১ টি উপগ্রহ বা চাঁদ, যার মধ্যে অন্যতম ইউরোপা। এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার জন্য সঠিক পরিবেশ আছে কি না তা জানতে এক যুগান্তকারী মিশন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে নাসা।
বরফের পুরু খোলসে ঢাকা বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর নিচে থাকতে পারে এক বিশাল সমুদ্র, যেখানে রয়েছে উষ্ণ ও পুষ্টিতে পূর্ণ এমন এক পরিবেশ, যা সম্ভবত সমর্থন করতে পারে প্রাণকে।
রহস্যময় এই মহাসাগরকে অনুসন্ধান করতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র মহাকাশযান ‘ইউরোপা ক্লিপার’।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা পাঁচ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন হেভি রকেটে করে ইউরোপা ক্লিপার উৎক্ষেপিত হয়েছে।
ইউরোপার বরফে ঢাকা পৃষ্ঠ ও এর নীচে সমুদ্র গবেষণার জন্য উন্নত টুল ব্যবহার করবে এই মহাকাশযানটি।
এ মিশনে গবেষকরা মেপে দেখবেন ইউরোপার বরফে ঢাকা পৃষ্ঠ কতটা পুরু। একইসঙ্গে এর নীচের সমুদ্র থেকে তারা তুলে আনবেন বিভিন্ন উপকরণ। যেগুলোর মধ্যে থাকা বিভিন্ন জৈব যৌগের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখবেন, এখানে প্রাণের অস্তিত্ব সমর্থনের মূল উপাদান রয়েছে কি না।
ইউরোপার পৃষ্ঠ থেকে আসা বিভিন্ন গ্যাসও খতিয়ে দেখবেন বিজ্ঞানীরা, যা এর বাসযোগ্যতা অর্থাৎ বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সম্পর্কে আরও তথ্য দেবে তাদের।
“আমরা আসলে বুঝতে চাই, সেই ভিনগ্রহের মহাসাগরে কী ঘটছে ও কী ধরনের রসায়ন বা জৈব রসায়ন সেখানে ঘটতে পারে,” বলেছেন এ মিশনের জ্যোতির্জীববিজ্ঞানী মরগান কেবল।
বসবাসের উপযোগী গ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লবণ, বরফ ও বিভিন্ন জৈব পদার্থ চিহ্নিত করাই এ অনুসন্ধানের প্রধান লক্ষ্য বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘ম্যাপিং ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার ফর ইউরোপা বা এমআইএসই’ নামের যন্ত্রটি ইউরোপার পৃষ্ঠে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালাবে, যাতে করে সেখানকার বিভিন্ন উপাদান চিহ্নিত করার কাজটি সহজ হয় বিজ্ঞানীদের জন্য।
ইউরোপার পৃষ্ঠের কাছাকাছি বিভিন্ন ‘হটস্পট’ও সন্ধান করবে যন্ত্রটি, যেখানে এটি খতিয়ে দেখবে গভীর সমুদ্র থেকে আসা বিভিন্ন উপাদান ইউরোপার বরফের খোলসে পৌঁছতে পারে কি না। এসব অঞ্চল শনাক্ত করতে সহায়তা করবে মহাকাশযানটিতে থাকা ‘ই-থেমিস’ নামের আরেকটি যন্ত্র।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, শনির চাঁদ ‘এনসেলাডাস’-এ যেমন জলীয় বাষ্প মিলেছিল তেমনি ইউরোপাতেও থাকতে পারে জলীয় বাষ্পের কুণ্ডলী। এ মহাকাশযানের ‘ইউরোপা-ইউভিএস’ যন্ত্রটি এসব খোঁজার পাশাপাশি এখান থেকে কোনও গ্যাস মহাকাশে নির্গত হচ্ছে কি না তাও পরীক্ষা করবে।
এ ছাড়াও, ইউরোপার বরফ পৃষ্ঠের পুরুত্ব ও সমুদ্রের লবণাক্ততা’সহ ইউরোপার ভেতরের গঠন গবেষণা করবে মহাকাশযানটি।
এজন্য ‘রিজন’ নামের এক রেডার সিস্টেম ব্যবহার করবে মহাকাশযানটি, যা বরফের নীচে ১৮ মাইল পর্যন্ত দেখতে ও পৃষ্ঠের নীচে পানিভর্তি কোনও গর্ত আছে কি না তা খুঁজে দেখবে।
ইউরোপা ক্লিপার মিশনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা। তবে অনেক নতুন প্রশ্নও সামনে আনতে পারে এটি, যা আমাদের নিয়ে যাবে পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে কিনা তা বোঝার কাছাকাছি।