চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে বিশাল ব্যবধানে জিতল ভয়ঙ্কর রেয়াল মাদ্রিদ।
Published : 23 Oct 2024, 03:02 AM
কয়েক মিনিটের দুর্বলতায় দুবার নিজেদের জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনতে হলো। আরেকটি হারের শঙ্কাও হয়তো তখন জেগেছিল রেয়াল মাদ্রিদ শিবিরে। তবে, এরপর যে ভয়ঙ্কর রূপ নিল দলটি, তা হলো দেখার মতো। আক্রমণের জোয়ারে ভাসিয়ে দিল প্রতিপক্ষকে। ভিনিসিউস জুনিয়রের দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে গুঁড়িয়ে দিল কার্লো আনচেলত্তির দল।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে আরেকটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি ৫-২ ব্যবধানে জিতেছে রেয়াল। ৩৩ মিনিটে পাঁচটি গোল করেছে তারা।
প্রথমার্ধে চার মিনিটের মধ্যে ডোনিয়েল মালেন ও জেমি গিটেন্সের গোলে চালকের আসনে বসে ডর্টমুন্ড। গতবারের ফাইনালে রেয়ালের বিপক্ষে হারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার আশাও জাগায় তারা।
তাতে দলটির কোচ নুরি শাহিন হয়তো একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন। ফরোয়ার্ড গিটেন্সকে তুলে ডিফেন্ডার আন্টোনকে নামান তিনি। এর খানিক পরই আন্টোনিও রুডিগারের গোলে লড়াইয়ে ফেরে রেয়াল। এই গোল হজমের পর আরেক ফরোয়ার্ড মালেনকে তুলে মিডফিল্ডার পাসকেলকে নামায় সফরকারীরা।
কিন্তু এরপর রেয়াল যে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, তাদের আটকানোর কোনো উপায় যেন ছিল না ডর্টমুন্ডের। ভিনিসিউসের তিন ও লুকাস ভাসকেসের এক গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শিরোপাধারীরা।
দ্বিতীয়ার্ধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা রেয়াল পুরো ম্যাচে গোলের জন্য ২৬ শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ১০টি। আর ডর্টমুন্ডের আট শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ডর্টমুন্ড প্রথম সুযোগে ব্যর্থ হওয়ার পর, কয়েক মিনিটে চাপ তৈরি করে রেয়াল। চার মিনিটের মধ্যে দুটি করে ফ্রি-কিক ও কর্নার পায় তারা। তবে, এই সময়ে গোলের জন্য চারটি শট নিলেও এমবাপে-ভিনিসিউসরা একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।
এরপর ম্যাচের গতি বেশ কমে যায়। দুই দলই বারবার ভুল পাসে বল হারাচ্ছিল। তেমনই এক ভুলের খেসারত রেয়াল দেয় ৩০তম মিনিটে, গোল হজম করে।
ডর্টমুন্ডের ওই আক্রমণ তেমন কোনো ভীতি জাগানিয়া ছিল না। বক্সের বাইরে ক্লিয়ার করার ভালো সুযোগও পান লুকাস ভাসকেস, কিন্তু তিনি হারিয়ে ফেলেন বল। প্রতিপক্ষের ওই উপহার পেয়ে ডান দিকে পাস দেন সেহু গিয়ার্সি, আর জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ডাচ ফরোয়ার্ড মালেন।
পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে উঠবে কী, চার মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল হজম করে রেয়াল। এই গোলেও তাদের রক্ষণের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। বক্সে এদুয়াঁ মঁদিকে কাটিয়ে ডান দিক থেকে মালেন পাস বাড়ান বাঁদিকে, সেখানে দুই ডিফেন্ডার ভাসকেস ও এদের মিলিতাওয়ের মাঝ দিয়ে চোখের পলকে ছুটে গিয়ে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড জেমি গিটেন্স।
দুই গোল খেয়ে যেন হুঁশ ফেরে রেয়ালের। হারিয়ে ফেলা গতিও ফিরে পায়। তবে দুর্ভাগ্য তখনও হয়তো তাদের তাড়া করছিল; ৩৭তম মিনিটে পরপর তাদের দুটি প্রচেষ্টা ক্রসবারে লাগে, প্রথমে রদ্রিগো এরপর জুড বেলিংহ্যামের শট।
অবশ্য ডর্টমুন্ডও সমানতালে ভীতি ছড়াতে থাকে। তাতে লড়াই জমে ওঠে। ইউলিয়ান ব্রান্ডটের পর গিটেন্সের আরেকটি জোরাল শট দারুণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি থিবো কোর্তোয়া।
বিরতির পর আক্রমণে আরও জোর দেয় রেয়াল। আর ডর্টমুন্ড ঘর সামলে রাখায় মনোযোগ দেয়। এতে স্বাগতিকরা একের পর এক আক্রমণ করলেও তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। কয়েক দফায় সুযোগ তৈরি করেও দুর্বল শট নেন ভিনিসিউস।
চাপ ধরে রাখার ফল অবশেষে ৬০তম মিনিটে পায় রেয়াল। শুরু থেকে বিবর্ণ থাকা সেন্টার-ফরোয়ার্ড এমবাপের দারুণ ক্রস খুঁজে পায় ছয় গজ বক্সে রুডিগারকে, লাফিয়ে হেডে গোলটি করেন জার্মান ডিফেন্ডার।
দুই মিনিট পর দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যায় রেয়াল। মদ্রিচের পাস বক্সের মুখে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি এমবাপে, সেই সুযোগে স্লাইডে শট নেন এক ডিফেন্ডার, কিন্তু বল চলে যায় ভিনিসিউসের পায়ে। অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
প্রবল চাপ সামলানোর মাঝেই ৮২তম মিনিটে ফের এগিয়ে যেতে পারত ডর্টমুন্ড; কিন্তু ফাঁকায় বল পেয়েও যথেষ্ট জোরে শট নিতে পারেননি মাক্সিমিলিয়ান, কোনোমতে পা দিয়ে ঠেকান কোর্তোয়া।
ওখান থেকেই পাল্টা আক্রমণে উঠে, প্রতিপক্ষের ছোট্ট এক ভুলের সুযোগে এগিয়ে যায় রেয়াল। ডান দিক থেকে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন ভাসকেস, ঠেকিয়ে দেন ডর্টমুন্ডের একজন, কিন্তু বল ফের পেয়ে যান ভাসকেস। এরপর ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে দুরূহ কোণ থেকে জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন স্প্যানিশ তারকা।
৮৬তম মিনিটে অবিশ্বাস্য গোলে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ভিনিসিউস। নিজেদের বক্সের পাশ থেকে বল ধরে প্রথমে ধীরে, পরে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন তিনি। বল জালে ছোঁয়া পেতেই পুরো বের্নাবেউ উল্লাসে ফেটে পড়ে।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটেও একক নৈপুণ্যে আরেকটি চমৎকার গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ভিনিসিউস। প্রতিপক্ষের একটু ভুলে বল ধরে বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। সব শঙ্কা দূরে ঠেলে বড় জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে রেয়াল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের রাউন্ডে লিলের মাঠে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল রেয়াল। পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবনমন হয়েছিল। এই জয়ে তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে উঠেছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ডর্টমুন্ড।
আগামী শনিবার লা লিগায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে রেয়াল। মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোর আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাসও বহগুণে বাড়িয়ে নিল তারা।
দিনের আরেক ম্যাচে বোলোনিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাস্টন ভিলা। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি।