প্রায় তিন বছর ধরে করোনাভাইরাসের ক্ষত সরানোর চেষ্টা চলছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। মহামারীতে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বহুমুখী ক্ষতি এখনও কাটানো যায়নি।
Published : 28 Jul 2024, 01:25 AM
বছরের প্রথমার্ধের বেশ কিছুটা সময়জুড়ে শৈত্যপ্রবাহের পর তীব্র দাবদাহ ও বন্যায় ক্ষতির শিকার শিক্ষাকার্যক্রম যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখনই শুরু হল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অচলাবস্থা; একের পর এক অনাকাঙ্খিত এসব ছুটিতে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ হবে কীভাবে, সেই উদ্বেগ সামনে আসতে শুরু করেছে।
দফায় দফায় শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্নতা শিখন কার্যক্রমে অংশ নিতে নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাগ্রহ-অনীহা বাড়িয়ে তুললে তা বার্ষিক মূল্যায়ন ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নজিরবিহীন সহিংসতার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ১৬ জুলাই থেকে ধাপে ধাপে বন্ধ করা হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংঘাত বাড়তে থাকলে জারি করা হয় কারফিউ। আস্তে আস্তে কারফিউ শিথিল হচ্ছে, সচল হচ্ছে অফিস-আদালত। জনসমাগাম বাড়ছে সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, সেটি এখনও নির্দিষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।
স্কুলের পাশাপাশি ব্শ্বিবিদ্যালয়েও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি-বিক্ষোভে আগে থেকেই ক্লাস বন্ধ ছিল। এখন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘ সেশনজটের চক্রে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলছেন, বারবার বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
বারবার বন্ধ হওয়ার প্রেক্ষাপটে শিখন ঘাটতির ধাক্কা কাটাতে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের। তারা সময় বাড়িয়ে অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণে সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ কে আজাদ বলছেন, প্রয়োজনে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এবং যে কোনো সরকারি ছুটির দিনও ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করে ক্ষতি যতটা পুষিয়ে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করতে হবে।
তীব্র দাহদাহ ও বন্যায় কয়েক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার কারণে তা বন্ধ রাখায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা, ষান্মাসিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন, এসএসসি ও এইচএসসির প্রস্তুতি সব কিছুইতে খারাপ প্রভাব পড়ছে, পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
এ পরিস্থিতির উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক আজাদ বলছেন, “শ্রেণিকার্যক্রমের সময়সূচি বাড়িয়ে বাড়তি ক্লাস নেওয়া যেতে পারে।”
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি না হওয়া এবং কারফিউ পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে, তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে সরকারের দুই মন্ত্রণালয় বলছে, এখনই তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াকে নিরাপদ মনে করছে না।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা ও আশেপাশের জেলাগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে চেষ্টা করছে সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের চাপ থাকলেও কোনো কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি এখনও।
দীর্ঘ হচ্ছে শিক্ষার ক্ষত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ১৫ জুলাই সহিংসতায় রূপ নেয়। ১৬ জুলাই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-পথচারীসহ ছয়জনের প্রাণ যায়।
উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরদিন সকালে সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং পরে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কোটা আন্দোলনের কারণে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে আরও পিছিয়ে পড়ল এইচএসসির পরীক্ষার্থীরা।
শিক্ষা ব্যবস্থা এমন সময়ে অন্তত অর্ধমাসের ধাক্কায় পড়ল, যখন সরকার নানাভাবে ছুটি সমন্বয় করে শিখন ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
প্রায় তিন বছর ধরে করোনাভাইরাসের ক্ষত সরানোর চেষ্টা চলছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। মহামারীতে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বহুমুখী ক্ষতি এখনও কাটানো যায়নি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও দফায় দফায় ব্যাহত হয়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। বছরের শুরুতেই তীব্র শীতের কারণে বেশ কিছু জেলায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল। শিখন ঘাটতি কমাতে রোজায় ছুটি কমিয়ে আনা হলেও দাবদাহে কারণে আবার দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।
কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সংঘাত, ঝরল প্রাণ
স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল ত্যাগের নির্দেশ
এরপর আরেক দফা শিক্ষাসূচি পরিবর্তন করে গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে আনা হয়, কয়েক সপ্তাহ শনিবারের ছুটি বাতিল করে ক্লাস চালু রাখে সরকার।
এর মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করে শিখন পদ্ধতি আমূল বদলে ফেলা হচ্ছে, যে কারণে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখাকে জরুরি মনে করছেন অভিভাবকরা।
তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েরা বাসায় পড়তে চাচ্ছে না, তারা মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে।
কীভাবে শিখন ঘাটতি পূরণ হবে, তা শিক্ষকরাও রয়েছেন শঙ্কায়।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার সাহা বলেন, “এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হবে। কারণ এখনকার লেখাপড়া কিন্তু পুরোটাই ক্লাস অ্যাক্টিভিটি বেইজড। সেটা করতে হলে স্কুল খোলা রাখার কোনো বিকল্প নেই। নানা রকম সমস্যায় আমরা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি।”
ষান্মাসিক মূল্যায়ন বন্ধ
২০২৪ সালের প্রথমার্ধের বেশি কিছু সময়জুড়ে জাতীয় নির্বাচন, শৈত্যপ্রবাহ এবং দাবদাহের কারণে স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। আবার জুনের শেষে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকায় ষান্মাসিক মূল্যায়ন পিছিয়ে ৩ জুলাই থেকে শুরু হয়।
চারটি পরীক্ষার পরেই কোটা আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন।
দাবদাহে বন্ধ স্কুল-কলেজ, ময়মনসিংহে 'রমরমা কোচিং বাণিজ্য'
সব প্রতিষ্ঠান খোলা, স্কুল কেন বন্ধ থাকবে: শিক্ষামন্ত্রী
তাপপ্রবাহ: ৫ জেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ সোমবার ছুটি
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তি আরিয়ার ষান্মসিক মূল্যায়ন দিচ্ছিলেন।
প্রিয়ন্তি বলেন, “ক্লাস বন্ধ থাকলে বাসায় তেমন পড়াশোনা হয় না। কারণ ক্লাসে বোঝানোর ব্যাপার থাকে। নিজে বই পড়ে কিছুটা আইডিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু তেমন লাভ হয় না। আর বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না।
“গরমের সময়ও বেশ কয়েকদিন স্কুল বন্ধ ছিল। পরে স্কুল খোলার পর অনেক চাপ পড়ে যায়। তখন কষ্ট হয়ে যায়।”
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে শঙ্কিত তার বাবা গোলাম মর্তুজা বলেন, “স্কুল বন্ধ আছে, এতে এক ধরনের ক্ষতি হচ্ছে বাচ্চাদের। আবার স্কুল খুললে আরেক ধরনের ভয় কাজ করবে। স্কুলে যাওয়া বা ফেরার পথে সহিংসতায় পড়ে গেলে প্রাণে বাঁচাই কঠিন হয়ে যাবে।”
মর্তুজার আরেক মেয়ে একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি বলেন, “নতুন শিক্ষাক্রমে ক্লাস না করলে তো বাচ্চারা পিছিয়ে পড়বে। আগের সেই কারিকুলাম না যে, বাসায় বসিয়ে সিলেবাস কমপ্লিট করাব। এখন তো প্রচুর গ্রুপ ওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট থাকে ওদের। তাই স্কুল বন্ধ থাকলে বই শেষ করতে পারবে না। তখন তো শিখন ঘাটতি থেকে যাবে।”
উদ্বেগ এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে
যেসব শিক্ষার্থী আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তাদের অভিভাবকদের শঙ্কা, শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তার প্রভাব পড়বে ফলাফলে।
ঢাকার মিরপুরের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা জেসমিন সুলতানার উদ্বেগ এ নিয়ে।
ক্লাস বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে এই অভিভাবক বলেন, “ওদের এসএসসি পরীক্ষার আর কয়েকটা মাস বাকি। এমনিতেই ছেলেটা পড়াশোনা করতে চায় না। স্কুল-কোচিং খোলা থাকলে তাও কিছুটা পড়ালেখা হয়।
“এখন একেবারে বই নিয়ে বসছে না। সারা দিন গেইমস খেলছে মোবাইলে। এভাবে তো সব পড়া ভুলে যাবে। পরে রেজাল্টটা খারাপ হলে সারা জীবনের ধাক্কা হয়ে থাকবে।”
পিছিয়ে গেল একাদশ ও ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস
এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ৩০ জুলাই একাদশের ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা জানিয়েছিল সরকার।
তবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে সময় বাড়ানোর পাশাপাশি একাদশের ক্লাস শুরুর সূচিও পেছানো হয়েছে। আগামী ৬ অগাস্ট থেকে একাদশের ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জুনে শিক্ষাবর্ষ শেষে জুলাই থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা এখনও ক্লাস শুরু করতে পারেনি।
মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কাওসার আজম বলেন, “নতুন ক্লাসে উঠল বাচ্চাটা। কিন্তু একটা দিন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারল না। বাচ্চারা ঘরে থাকতে চাচ্ছে না, বন্ধুদের সাথে টিচারদের সাথে দেখা করতে চায়। খেলাধুলা করতে চায়।”
বিপাকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
কোভিড মহামারীতে শিক্ষা সূচি এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় এমনিতেই একাদশের পরীক্ষা শুরু হয় তিন মাস পিছিয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এবার পরীক্ষার্থীরা আরও পিছিয়ে পড়েছে।
দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় ১ অগাস্ট পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ অগাস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা করছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়েছে, সেগুলো নেওয়ার বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা আশা করছি ১১ অগাস্টের পর থেকে সেই পরীক্ষাগুলো নিতে পারব।”
বন্যা: কুড়িগ্রামে ৪১৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ
সিলেটে বন্যায় ২৭৩ প্রাথমিকে পাঠদান বন্ধ
গাইবান্ধায় ১৫৮ স্কুল বন্ধ, জলের নিচে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমি
পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটছে।
ঢাকার শহিদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাইমিনা ইসলাম বলেন, “টানা পরীক্ষা হলে একটা ছন্দ থাকে। পড়াশোনাও ঠিক থাকে। এখন নতুন করে পড়ার কিছু নাই। শুধু রিভিশন দিচ্ছি। কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এখন কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ব, ভেবে পাচ্ছি না।”
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন রায়হান ইসলাম। তার মা রুবিনা পারভীন পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
“পরীক্ষা বন্ধ আছে, এটা এক ধরনের সমস্যা। শুরু হলে তখন আরেক টেনশনে থাকতে হবে। পরীক্ষার মধ্যে যদি ঝামেলা শুরু হয়ে যায়, সেই বিষয়টাই এখন বেশি ভাবাচ্ছে।”
তার অনুরোধ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সরকার পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিকে যেন নজর দেয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা থাকছেই
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার, সুপার গ্রেড কার্যকর করা এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুললে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলন চলমান রয়েছে। তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
ঘাটতি কমাতে চাই বাড়তি পদক্ষেপ
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন মনে করেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যে পরিণতি এনেছে, তাতে শিক্ষার সবক্ষেত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতামূলক মানসিকতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।
“অনেক শিক্ষার্থীই এক ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সেই পরিস্থিতি থেকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। সবাই আন্তরিক থাকলে, অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে।”
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান কুমার সাহার দাবি, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে পড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে শনিবার স্কুল খোলা রাখলে শিক্ষকদের জন্য তা চাপ হয়ে যাবে।
“শুক্রবার ব্যক্তিগত কাজ করতে করতেই সময় চলে যায়। সপ্তাহে আমাদের ১২-১৩টা ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময় শিক্ষক ঘাটতির কারণে অন্যান্য ক্লাসও নিতে হয়। এই ক্লাসগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, শনিবার স্কুল খোলা থাকলে শুধু নামেই ক্লাস হচ্ছে। ইফেক্টিভ ক্লাস নিতে হলে শিক্ষকদেরও টাইম দিতে হবে। আর প্রত্যন্ত এলাকার জন্য এটি আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।”
তবে আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষাদান করলে ঘাটতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন বিধান সাহা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ বলছেন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ক্যাম্পাসে পেশীশক্তির প্রভাব কমাতে হবে।
“ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হওয়ার জন্য বাইরে থেকে চাপ না আসলে বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে চালানো যাবে। এর মানে এই নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। পরিশীলিত, সুন্দর, যুক্তিসঙ্গত ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা থাকতে হবে।”
সরকারের পরিকল্পনা কী?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ১ অগাস্ট পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ থাকবে।”
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, সরকার এখন জেলার স্কুলগুলোর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
“আমাদের টার্গেট ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিদ্যালয় বাদ দিয়ে অন্যান্য জেলায় যত দ্রুত সম্ভব মাধ্যমিক বিদ্যালয় যাতে খুলে দিতে পারি, আমরা সেই চেষ্টাটা করছি৷”
এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করে পাঠদান শুরু করার জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুরোধ রাখবে।