নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ‘চালককে খুন করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে পালানোর সময়’ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফতুল্লার চরকাশীপুর এলাকার একটি নির্জন স্থানে ইউসুফ (৪০) নামের চালককে খুন করে তার অটোরিকশাটি নিয়ে পালানোর সময় টহল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনজন।
গ্রেপ্তাররা হলেন: নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকার ভাড়াটিয়া তোজাম্মেল হকের ছেলে মাহবুব (২৪), একই এলাকার আমিন (২৩) ও কাশীপুরের আক্তার হোসেনের ছেলে কাউছার (২২)।
গ্রেপ্তাররা পেশায় রিকশাচালক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার বিকালে তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নিহত ইউসুফ লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার কালকিনি গ্রামের প্রয়াত আলী হোসেনের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ নগরীর পশ্চিম দেওভোগের আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কের খানকা মোড়ে ভাড়াবাসায় তিন মেয়েকে নিয়ে থেকে স্থানীয় একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় অটোরিকশা নিয়ে চালাতেন। কয়েক মাস আগে তার স্ত্রী মারা যান।
নিহতের মেয়েরা জানান, শনিবার বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গ্যারেজে যান তার বাবা। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর আর ফেরেননি। ভোরে পুলিশের মাধ্যমে বাবার মৃত্যুর খবর পান মেয়েরা।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোহসীন বলেন, “শনিবার রাত দেড়টার দিকে রাস্তা দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনজন। গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে টহলে থাকা পুলিশ। তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। তখন রিকশার মালিককে ডেকে আনতে বলেন ওই সময় টহলে থাকা ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন মোল্লা।
“গ্যারেজ মালিক ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, এই অটোরিকশা ইউসুফ নামের এক ব্যক্তি নিয়ে বের হয়েছিলেন। এরপর পুলিশ আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ইউসুফকে খুন করে তার অটোরিকশাটি বিক্রির পরিকল্পনা করছিল বলে জানায়।”
পরে আটকদের দেওয়া তথ্যে রোববার ভোর ৪টার দিকে ফতুল্লার চরকাশীপুর এলাকার একটি নির্জন স্থান থেকে ইউসুফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ সময় ঘটনাস্থলের অদূরে বালুর মধ্যে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় রক্তমাখা লোহার রড জব্দ করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
থানার পরিদর্শক মোহসীন আরও জানান, গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিও একই গ্যারেজের রিকশা চালাতেন। তারা একে-অপরের পরিচিত। রিকশাটি ছিনতাই করে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল আসামিদের। এ কারণে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউসুফের রিকশায় চড়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে নির্জন স্থানে গিয়ে তাকে খুন করেন। খুনের পর অটোরিকশার ব্যাটারিও খুলে ফেলে, আলাদা করে বিক্রির জন্য। আসামিদের একজনের বাসার খাটের নিচ থেকে ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই বাদী হয়ে রোববার সকালে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “পৃথক তিনটি আদালতে তিন আসামি তাদের জবানবন্দি দেন। আদালতে তারা নিহতের ভাড়ায় চালানো রিকশা ও রিকশার ব্যাটারি বিক্রির উদ্দেশে খুন করেন বলে স্বীকার করেন। খুনের জন্য তারা লোহার রড ব্যবহার করেন বলেও জানান।”