কবি নজরুলের স্মৃতি নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে

কবি নজরুণের স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক।

ইলিয়াস আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 05:16 PM
Updated : 24 May 2023, 05:16 PM

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি রক্ষায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দারোগাবাড়িতে নির্মিত নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের স্মারকগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে। কবির ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এ কারণে দর্শনার্থী হারাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। 

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে [বাংলা সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬]; মৃত্যু ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট [১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ] 

কবির স্মৃতি রক্ষায় ২০০৮ সালে ত্রিশালেল দারোগাবাড়ি ও বিচুতিয়া বেপারীবাড়িতে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ দুটি স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনায় রয়েছে ‘নজরুল ইন্সটিটিউট’। এ দুই কেন্দ্রের জন্য রয়েছেন একজন সহকারী পরিচালক। আর প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছেন আরও চারজন করে কর্মচারী। 

জাতীয় কবির ১২৪তম জন্মবার্ষিকী ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য আনতে দারোগাবড়ীর স্মৃতিকেন্দ্রে জাঁকজমক অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

জন্মবার্ষিকী ঘিরে দারোগাবাড়ি ও বিচুতিয়া বেপারীবাড়িতে দুই নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রে সাদামাটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। 

স্মৃতিকেন্দ্রের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা ১৯১৪ সালে ভারতের আসানসোলের হোটেলের কর্মচারী কাজী নজরুল ইসলামকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজির শিমলায় নিয়ে আসেন। পরে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান নজরুলকে। স্কুল কিছুটা দূরে হওয়ায় এখানে তিনমাস থাকার পর নজরুলকে বিচুতিয়া বেপারীবাড়িতে জায়গীর দেওয়া হয়।

কাজী রফিজউল্লাহর নাতি কাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, “কবি কাজী নজরুল জায়গীর থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে চলে যান কুমিল্লায়। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ২০০৮ সালে দুইটি স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় খুব একটা দর্শনার্থী আসছে না।” 

তিনি বলেন, “নজরুল যে খাটটিতে ঘুমাতেন সেই খাটটি সংরক্ষণের অভাবে বেহাল পড়ে আছে। ঘুণপোকায় ধরে খাটের বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। এটি সংরক্ষণ করা হলে অন্তত আরও পঞ্চাশ বছর খাটটি টিকে থাকত।” 

এখানে আসা দর্শনার্থী ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, “সাম্য ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নামটির সাথেই আমাদের আবেগ অনুভূতি জড়িত। কিন্তু তার স্মৃতিকেন্দ্রে এসে হতাশ হয়ে ফিরছি। কাজির শিমলা স্মৃতিকেন্দ্রের নিচতলায় রাখা নজরুলের একমাত্র ব্যবহৃত খাটটি সংস্কারের অভাবে ঘুণে ধরেছে। 

“এই বেপারীবাড়িতে রাখা নজরুলের গ্রামফোনটি অচল। এ ছাড়া এখানে দেখার মতো আর কিছু নেই। রয়েছে নজরুলের কিছু ছবি ও বই। নতুন প্রজন্মকে নজরুল সম্পর্কে জানাতে হলে স্মৃতিকেন্দ্রগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করতে হবে।”

এ বিষয়ে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান মণ্ডল বলেন, “এই স্মৃতিকেন্দ্রে কবি নজরুলের ব্যবহৃত খাট, গ্রামফোন ছাড়াও দুইটি দুর্লভ ছবি এবং বই রয়েছে। সাধারণ মানুষ এখানে এসে নজরুল সম্পর্কে জানতে পারছেন।” 

সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, “খাটটি সংস্কারের পাশাপাশি স্মৃতিকেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মানুষের পদচারণা আরও বাড়বে।” 

নজরুলের জন্মদিন ঘিরে বেপারীবাড়ির স্মৃতিকেন্দ্রে ২৬ ও ২৭ মে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “এবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২৫ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তী। কবি নজরুলের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত দুইটি স্মৃতিকেন্দ্রসহ নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।” 

এই স্থানগুলো সংরক্ষিত থাকলে নতুন প্রজন্ম কবি নজরুলকে জানতে আরও বেশি আগ্রহী হবে বলে তিনি মনে করেন। 

এসব স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।