‘রহিমা বোয়ালমারী এসে আশ্রয় চান, পরিবারকে জানালে বিরক্ত হয়’

রহিমা ফরিদপুরে এসে অপহরণের কথা বলেছিলেন।

শেখ মফিজুর রহমান শিপনফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 12:58 PM
Updated : 25 Sept 2022, 12:58 PM

নিখোঁজের ২৯ দিন পর আলোচিত রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। রহিমা ওই বাড়িতে এসে অপহরণের কথা বলেছিলেন। খুলনায় ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে এমন কথাও বলেছিলেন বলে ওই বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন।

রোববার সকালে কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে জয়নাল খান সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে রহিমা খাতুন আমার মামার বাড়িতে এসে আশ্রয় চান। উনি তাদের বলেন যে, উনাকে ছয় মাস আগে অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোথায় ছিলেন তা আমাদের বলেননি, ঠিকানাও দেননি। উনি এটাও বলেন যে, আমি ওখানে (খুলনায়) গেলে আমাকে মেরে ফেলে দিবে। কিবরিয়ার সঙ্গে নাকি জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।”

কুদ্দুস মোল্লার সঙ্গে রহিমা বেগমের পরিচয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়নাল খান বলেন, কুদ্দুস মোল্লার একসময় খুলনার সোনালী জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বছর দশেক আগে মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কুদ্দুস মোল্লা পরিবার নিয়ে বোয়ালমারী চলে আসেন।

জয়নাল খান আরও বলেন, রহিমা বেগম সেখানে স্বাভাবিক জীবন-যাপনই করছিলেন। শুক্রবার তিনি ইউটিউবে রহিমা বেগমের ছবিসহ একটি নিখোঁজ সংবাদ দেখতে পান। তখন তিনি গুগলে রহিমা বেগম সম্পর্কে সার্চ দেন। তারপরই তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর দেখতে পান। তখন তিনি বাড়ির সবাইকে ডেকে বিষয়টি বলেন। তখন তাদের মনে সন্দেহ জাগে যে, হয়তো কাউকে ফাঁসানোর জন্য এই কাজটি করছেন।

তখন কুদ্দুস মোল্লার ছোট ছেলে আল আমিন রহিমার পরিবারকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করে। আল আমিন কোথাও থেকে রহিমার ছেলে মিরাজের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। পরে সেই নাম্বারে ফোন দিলে তা রিসিভ করেন মিরাজের স্ত্রী। তিনি রহিমা বেগমের কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং আবার ফোন করতে নিষেধ করেন বলেও জানান জয়নাল খান।

পরে কুদ্দুস মোল্লার পরিবার শনিবার সকালে বিষয়টি বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশাররফ হোসেনকে জানান। মোশাররফ হোসেন একসময় কর্মসূত্রে খুলনায় ছিলেন। তিনি সকালেই খুলনা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানান। ওই কাউন্সিলর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশকে খবর দেন। বিকালে কাউন্সিলর কুদ্দুস মোল্লার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে শনিবার রাতে খুলনা থেকে পুলিশ এসে রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়। এ সময় খুলনার সেই কাউন্সিলরও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন।

জয়নাল খান আরও জানান, পুলিশ এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরা বেগম (৬০), ছোট ছেলে আল আমিন (২৫) এবং কুদ্দুস মোল্লার ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রেহেলা বেগমকে (৪৫) খুলনায় নিয়ে যায়।

কুদ্দুস মোল্লার জামাতা নূর মোহাম্মদ বলেন, একদিন দুপুরে এসে তিনি বাড়িতে রহিমা বেগমকে দেখতে পান। রহিমা বেগম ঘরের একটি খাটে শুয়েছিলেন। তিনি তাকে আগে আর কখনও দেখননি। ফলে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে পরিচয় জানতে পারেন।

নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, “শুক্রবার মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা অকারেন্সেটা জানতে পারি। পরে আমরা উনার ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তারা আমাদের যোগাযোগের কোনো উত্তর দেয়নি। তারপরই আমরা ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি।“

বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, “ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি খুলনার কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামকে জানাই। আমি তাকে বলি, ভাই, এমন আপনার এলাকার একজন মহিলা হারানোর বিজ্ঞপ্তি দেখতাছি, চেনেন নাকি? উনি তখন আমাকে বলেন, হ্যাঁ, আমি চিনি।

এর মধ্যে রহিমা খাতুন একদিন বোয়ালমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়েও গিয়েছিলেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামসুল হক শেখ।

তিনি বলেন, “রহিমা বেগম ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন। তিনি আমাকে বলেন, ভাই আমাকে একটি নিবন্ধন করে দিতে হবে। আমি বললাম, বাড়ি কোথায়? উনি বললেন, বাড়ি বাগেরহাট, আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি।

“আমি জিজ্ঞাস করি, এখানে কোথায় থাকেন? বলেন, আমার নিজের বাড়ি। আমি তখন উনাকে বলি, আপনার ওয়ার্ডের মেম্বারকে নিয়ে আসেন। আপনি যেহেতু এখনও নিবন্ধন করতে পারেননি, আপনি তো বাংলাদেশের নাগরিক না। মেম্বারকে নিয়ে আসেন, আমি নিবন্ধন করে দেওয়ার চেষ্টা করব। পরে তিনি চলে যান। আর আসেননি। পরে আমি জানতে পারি, তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে।”

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. আবদুল ওহাব বলেন, “খুলনা মহানগর পুলিশের এডিসি আবদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে।”

খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ অগাস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। এরপর থেকে তার সন্ধান করছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার বোন। এনিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুরে তার মায়ের লাশ পাওয়া গেছে বলে মরিয়ম মান্নান ফেইসবুক পোস্ট দেন। এরপর এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।

লাশ শনাক্তে গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় যান। এ সময় মরিয়ম লাশটি তার মায়ের দাবি করে নিয়ে যেতে চান। সেখানে লাশের পরিহিত কাপড় দেখে মরিয়ম দাবি করেন, লাশটি তার মায়ের। পরে মরিয়ম মান্নান ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন।

আরও পড়ুন:

Also Read: যেভাবে উদ্ধার হলেন রহিমা বেগম

Also Read: ‘নিখোঁজ’ খুলনার রহিমা ফরিদপুর থেকে উদ্ধার, ছিলেন ‘আত্মগোপনে’

Also Read: বস্তাবন্দি লাশটি রহিমার? নিশ্চিত হতে খুলনা থেকে ফুলপুরে মেয়েরা

Also Read: রহিমা বেগমকে নিয়ে যা বললো পিবিআই

Also Read: আমার কলিজা শান্ত হয়েছে: মরিয়ম