রহিমা বেগমকে নিয়ে যা বললো পিবিআই

পিবিআই বলছে, তদন্ত শেষে তারা বিস্তারিত জানাবে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 11:17 AM
Updated : 25 Sept 2022, 11:17 AM

খুলনার দৌলতপুর থেকে রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি অপহরণ না-ও হতে পারে বলে মনে করছে পিবিআই।

রোববার দুপুরে নগরীর হাজী মহসিন রোডের পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমার কাছে সাদা রঙের একটি শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, আইড্রপ, ওষুধ, সালোয়ার কামিজ এবং ছোট একটি হাত ব্যাগ ছিল।

“সাধারণত একজনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে এই জিনিসগুলো থাকার কথা না।”

এটা অপহরণ বলে মনে হচ্ছে কি-না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা এখনও মামলা তদন্ত করছি। যেহেতু আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানাবো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, অপহরণ না-ও হতে পারে “

তিনি বলেন, “আগেও আমরা ওখানে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্ত করেছি। সেখানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এই ঘটনা ঘটছে কি-না তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

“শনিবার দিবাগত রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। রোববার সকাল ১১টার দিকে কেএমপি তাকে রিসিভ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

রহিমাকে উদ্ধারের করার পর থেকে তিনি কথা বলছেন না জানিয়ে পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, “তিনি তেমন কোনো কথা-বার্তা বলছেন না। একটু নার্ভাস মনে হচ্ছে। তবে সুস্থ আছেন। আশা করছি, জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হবো।”

রহিমা আত্মগোপনে ছিলেন কি-না প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরে তিনি বান্দরবানে গিয়েছিলেন। সেখানে কয়েকদিন ছিলেন। তারপর চট্টগ্রামে কয়েকদিন ছিলেন। সেখান থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে তিনি আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান।

“কুদ্দুস বেশ কয়েক বছর আগে খুলনার সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বোয়ালমারীতে চলে যান। সেই সুবাদে তাদের পরিচয় ছিল।”

রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মরিয়মের সঙ্গে আমার শনিবার কথা হয়েছে। যখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি, রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়েছে তখন আমি মামলার বাদী আদরী বেগমকে ফোন করি।

“কথা বলার একপর্যায়ে আদরী মরিয়ম মান্নানকে দেয়। খুব সম্ভবত তখন মরিয়ম ঢাকায় ছিলেন।”

মরিয়মের বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট তাদের বিভ্রান্ত করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর।

মুশফিকুর বলেন, “তিনি এভাবে পোস্ট দিয়ে আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করেছেন। আমি জানি না তিনি কেন এটা করেছেন। তবে আমরা এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। তার মাকে পাওয়া যাচ্ছিল না জন্য হয়তো তিনি এ রকম রিঅ্যাক্ট করেছেন।”

এই মামলায় দৌলতপুর থানা পুলিশ ও র‌্যাববের হাতে আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, “ইতোমধ্যে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বলা যাবে তারা অপরাধী কি না।

পরবর্তী সময়ে আইনি প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে মুশফিকুর বলেন, যেহেতু আদালতে মামলা চলমান তাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজই রহিমা বেগমকে আদালতে তোলা হবে। পরের সিদ্ধান্ত আদালত দেবেন।

গত ২৭ অগাস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমে আর বাসায় ফেরেননি রহিমা। সম্ভাব্য সবস্থানে খুঁজেও তার সন্ধান না পেয়ে বাড়ির লোকজন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার অপহরণের মামলা করেন। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পুলিশের ওই ইউনিট।

৫৫ বছর বয়সী এ নারীর সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক মাস ধরে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তার সন্তানরা।

Also Read: আমার কলিজা শান্ত হয়েছে: মরিয়ম