বৃহস্পতিবার রাতে মরিয়ম মান্নান ফেইসবুক পোস্টে জানান, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এই মাত্র।’
Published : 23 Sep 2022, 02:22 PM
ময়মনসিংহে ১৩ দিন আগে উদ্ধার করা বস্তাবন্দি লাশটি খুলনার দৌলতপুরের রহিমা বেগমের কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ফুলপুরে পৌঁছেছেন তার চার মেয়ে।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাল আল মামুন জানান, শুক্রবার রহিমার লাশের সন্ধানে তার চার মেয়ে থানায় এসেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেইসবুক পোস্টে মায়ের লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এই মাত্র।”
তবে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এবং পুলিশ বলেছে, লাশটি রহিমা বেগমের কি না নিশ্চিত নন তারা।
এ বিষয়ে মরিয়মের ভাই মো. সাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “লাশ পাওয়ার কথা আপার কাছে শুনেছি। মায়ের পরনের পোশাকের কয়েকটি ছবি দেখে লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে আপা। এ নিয়ে আপা ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, কান্নাকাটিও করছে।”
তবে কখন এবং কোথা থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি সাদী।
গত ২৭ অগাস্ট খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। ৫৫ বছর বয়সী এ নারীর সন্ধান চেয়ে ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন তার বাড়ির লোকজন।
রহিমার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে স্থানীয় বিল্লাল হোসেন ও হেলালের সঙ্গে তাদের মামলা চলছে বলেও সে সময় জানানো হয়েছিলো।
দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৭ অগাস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমে আর বাসায় ফেরেননি রহিমা খাতুন। সম্ভাব্য সবস্থানে খুঁজেও তার সন্ধান না পেয়ে বাড়ির লোকজন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার অপহরণের মামলা করেন। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।
পরে রহিমা খাতুন নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ছয়জনকে পুলিশ ও র্যাব গ্রেপ্তার করে বলে জানান নজরুল।
ফুলপুর থেকে লাশ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানা এলাকা থেকে এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়। ওই থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন আমাদের জানিয়েছেন, যে নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে, তার বয়স ৩২। তার ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ।
ফুলপুরে যে নারীর লাশ পাওয়া গেছে তা মরিয়মের মায়ের কিনা নিশ্চিত নয় জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মরিয়মের মা রহিমা খাতুনের বয়স ৫৫ বছর। ফুলপুর থেকে উদ্ধার মৃত নারীর বয়সের সঙ্গে মরিয়মের মায়ের বয়সের ফারাক রয়েছে।
“যদি তার মেয়ে পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেও থাকেন এরপরও ডিএনএ টেস্ট করে প্রকৃতভাবে লাশ শনাক্ত করতে হবে।“
“পরিবার এ নিয়ে কথা বললে আমরা পরবর্তীতে আগ্রসর হব।” যোগ করেন পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাল আল মামুন জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর উপজেলার বওলা পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর ছবি ও তার পরনের থাকা পোশাকের ছবি ফেইসবুকে দেখে মরিয়মের মেয়েরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তিনি বলেন, রহিমার লাশের খোঁজে শুক্রবার তার চার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, কানিজ ফাতেমা, মাহফুজা আক্তার, আদুরী আক্তার থানায় এসেছেন। লাশ শনাক্তে সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন তারা। কিন্তু তারা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা দিয়ে লাশ শনাক্ত সম্ভব হচ্ছে না।
মরিয়মের মেয়েরা ফুলপুর থেকে উদ্ধার লাশের ডিএনএ পরীক্ষা করার আবেদন করেছে। এর জন্য নমুনা ঢাকায় সিআইডির কাছে পাঠানো হবে বলে জানান ওসি।
ফুলপুর থানায় মরিয়মের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। লাশটি মায়ের কি করে নিশ্চিত হলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আমার মায়ের জামা কাপড় দেখে নিশ্চিত হয়েছি, এটা তারই লাশ।”