ইশতেহারে গাজীপুরকে মডেল সিটি হিসাবে গড়ার অঙ্গীকার নিয়াজ উদ্দিনের

সবুজ গাজীপুর গড়ে তোলার লক্ষ্যে বছরে কমপক্ষে তিন লক্ষ বৃক্ষরোপন করবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন মেয়র প্রার্থী।

আধুনিক স্থাপত্যবিদ ও নগর পরিকল্পনাকারীদের সহযোগিতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন‌। 

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি গাজীপুর সেন্ট্রাল পাবলিক কলেজের হল রুমে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। 

স্বাস্থ্য সচিব থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া নিয়াজ উদ্দিনের ইশতেহারে নগরীর যানজট নিরসন, শিক্ষা ব্যবস্থা, সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, শ্রম হাসপাতাল নির্মাণ, নয়টি আবাসিক জোন করা, বছরে তিন লক্ষ বৃক্ষরোপনসহ কয়েকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। 

ইশতেহারে তিনি মেধা ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৃজনশীল আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বিশ্ব মানের স্কুল, কওমী মাদ্রাসা, কলেজ ও গাজীপুর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার কথা বলেছেন। 

নাগরিকদের সহযোগিতায় সিটি কর্পোরেশনকে পেশীশক্তি, মাস্তানি, টেন্ডারবাজিসহ সকল অনৈতিক প্রভাব বলয় মুক্ত করার অঙ্গীকার রয়েছে এই ইশতেহারে।

নগরকে একটি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা করবেন বলে ইশতেহারে জানিয়েছেন।

এ ছাড়াও যোগাযোগের উপযোগী নতুন নতুন রাস্তা, ফুটপাত নির্মাণসহ রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং ড্রেনসহ টেকসই রাস্তা, যানজট নিরসনের জন্য জয়দেবপুর রেলক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ ও নগরবাসীর চলাচলের জন্য চক্রাকার সিটিবাস এবং ঢাকা পর্যন্ত বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা, উন্নতমানের বাস টার্মিনাল, বাস স্টপেজ নির্মাণ করার কথাও উল্লেখ করেছেন এ ইশতেহারে। 

প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিউনিটি হেলথ সেন্টার করার মাধ্যমে সর্ব সাধারণের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা, গার্মেন্টস শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য গাজীপুর মহানগর শ্রম হাসপাতাল নির্মাণ করাও ছিল তার অঙ্গীকারে। 

মহানগরের বাজারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং টিমের মাধ্যমে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করাসহ গার্মেন্টস কর্মীদের নিরাপদ আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ, নগরের নয়টি থানায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নয়টি আবাসিক জোন স্থাপন করার কথাও উল্লেখ রয়েছে এই ইশতেহারে। 

জাতীয় পার্টির এই মেয়র প্রার্থীর ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে প্রত্যেক ওয়ার্ডে শিশুপার্ক নির্মাণ, নগরের দুঃস্থ এবং অসহায় ভূমিহীন পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণের কথা। 

এ ছাড়া পরিচ্ছন্ন গাজীপুর নগরী গড়ার লক্ষ্যে প্রতিদিন রাত্র ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে আবর্জনা অপসারণে কার্যকর পদক্ষেপ করা এবং বর্জ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও ইশতেহারে বলা হয়েছে। 

ইশতেহারে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, প্রতি ওয়ার্ডে মসজিদ, ঈদগাহ্ মাঠ, কবরস্থান, মন্দির, অন্যান্য উপাসনালয় ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, নগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানকে আধুনিককরণ করা হবে। 

একইসঙ্গে তিনি সবুজ গাজীপুর গড়ে তোলার লক্ষ্যে বছরে কমপক্ষে তিন লক্ষ বৃক্ষরোপন করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। 

ইশতেহারে আরও উল্লেখ করেছেন, সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করার জন্য নিয়মিত বিশেষ ব্যক্তিগণের পরামর্শ গ্রহণ, একটি পরিবারকে সাবলম্বী ও সমৃদ্ধ করার জন্য বেকার সমস্যা সমাধান, মহানগরের মধ্যকার চিলাই নদী, তুরাগ নদী, বালু নদীসহ নদী ও খাল খনন করে বিশুদ্ধ পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হবে। 

নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডভিত্তিক নিঃস্ব ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার জন্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসার ব্যবস্থা করা ও রিকশা প্রদান, দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে গাভী, সেলাই মেশিন বিতরণ করাসহ স্থায়ী কৃষি পণ্য বিক্রয়ের জন্য কৃষি মার্কেট স্থাপন করবেন বলেও জানিয়েছেন এই মেয়র প্রার্থী । 

শতভাগ আবাসিক ও শিল্প কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল মসজিদের ইমাম, খতিবদের নিয়মিত মাসিক সম্মাননা প্রদানেরও অঙ্গীকার রয়েছে এই ইশতিহারে। 

সবশেষ এম এম নিয়াজ উদ্দিন গাজীপুর সিটিকে বাংলাদেশে একটি মডেল সিটি হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা ও একটি মূল্যবান ভোট প্রার্থনা করেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য হারুনুর রশিদ, অ্যাড. মনোয়ার হোসেন, শেখ মাসুদুল আলম টিটু, জাকির হোসেন, জাতীয় পার্টির নেতা জহিরুল ইসলাম সরকার, আশরাফুল ইসলাম আলম, আব্দুস সালাম মোল্লা, আমান উল্লাহ আমান, নুরুল ইসলাম নুরু, সালামত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

আরও পড়ুন