নগর ভবনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন গাজী আতাউর

নির্বাচিত হলে জবাবদিহিমূলক সিটি করপোরেশন, দেশি-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে নগর বিশেষজ্ঞ টিম, বিশিষ্ট নাগরিক ও আলেমদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 02:34 PM
Updated : 17 May 2023, 02:34 PM

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী গাজী আতাউর রহমান।

বুধবার দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৩৪ দফা সম্বলিত ইশতেহার নগরবাসীর উদ্দেশে তুলে ধরেন তিনি। প্রতীক বরাদ্দের পর গাজীপুরে এই প্রথম কোনো প্রার্থী ইশতেহার ঘোষণা করলেন।

আগামী ২৫ মে এই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ রয়েছে প্রার্থীদের কাছে। সে হিসেবে প্রচারের সময় শেষ হওয়ার ছয়দিন আগে নিজের ইশতেহার ঘোষণা করলেন চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দলের নেতা।

ইশতেহারে গাজী আতাউর বলেছেন, নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। গঠন করা হবে বিশেষজ্ঞ কমিটি, নগর সরকার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও জাকাত বোর্ড।

জয়ী হলে নগর ভবন ধনী-গরিব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

গাজী আতাউর বলেন, “নগরবাসী ভোটে নির্বাচিত করলে ইশতেহারে থাকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গাজীপুরকে একটি উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানবিক শান্তির নগরী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।”

নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে কেবল দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেননি গাজী আতাউর, আগের সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

এই প্রার্থী বলেন, “জবাবদিহিমূলক সিটি করপোরেশন করে গড়ে তোলা হবে, নগরবাসী পাবেন ওয়ান স্টপ সেবা। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে নগর বিশেষজ্ঞ টিম, বিশিষ্ট নাগরিক ও আলেমদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। নগর সরকারে মেট্রোপলিটন কাউন্সিল থাকবে। মহানগরের প্রতিটি পরিবারকে সমন্বিত সুপেয় পানি সরবরাহের আওতায় আনা হবে। সারফেস, গ্রাউন্ড এবং রেইন ওয়াটারের পরিকল্পিত বৈজ্ঞানিক ব্যবহার করা হবে। ২৬০টি খাস পুকুর দখলমুক্ত করে তাতে পানি সংরক্ষণ করা হবে।”

নির্বাচিত হলে গাজীপুরে নদ-নদী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গাজী আতাউর।

তার ইশতেহারে বলা হয়েছে, নির্বাচিত হলে নগরীর জন্য শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। দূষণ প্রতিরোধে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি বাসা বাড়ি পাবে গ্যাস ও পানির সংযোগ।

ওয়ার্ডভিত্তিক কবরস্থান ও নির্মাণের কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গাজী আতাউর বলেন, “স্বাক্ষরতার হার শতভাগ করতে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাভিত্তিক গণস্বাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করা হবে। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা ধার্য করা হবে।পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের আলাদা আলাদা আবাসন, হাসপাতাল ও পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে।  তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হবে। শ্রমিকদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য সার্বক্ষণিক (২৪/৭) কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হবে।“

মেয়র নির্বাচিত হলে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ আধুনিকায়ণের প্রতিশ্রুতিও দেন ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা।

তিনি বলেন, “ইজতেমা মাঠের পাশে হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। টঙ্গী ও জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনকে আইকনিক স্টেশনে পরিণত করা হবে। গাজীপুরে যানজট নিরসনে দীর্ঘ মেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম করা হবে। শহরজুড়ে আন্তঃনগর পরিবহণের ব্যবস্থা করা হবে।”

এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, যানজট নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ভিক্ষুক, পাগল, বেওয়ারিশ ও পথবাসী মানুষের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও জানান গাজী আতাউর।

নির্বাচনে জয়ী হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত নগর ভবন, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ ও নদী দূষণ রোধ, পানি সমস্যা সমাধান, নাগরিকদের নিরাপত্তা, ফুটপাত দখলমুক্ত, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাসা ভাড়া প্রণয়ন, হকার, ছিন্নমূল ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পুনর্বাসন, নারীবান্ধব গণপরিবহণ; হকার, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগর গড়াসহ সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই মেয়র প্রার্থী।

এই ইশতেহার বাস্তবায়নে নগরবাসীর মতামত নেবেন বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে নগরবাসীর উদ্দেশে গাজী আতাউর রহমান বলেন, “গাজীপুরের সমস্যার সমাধান করতে চাইলে এবং গাজীপুরকে বাসযোগ্য টেকসই, উন্নত, আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে হাত পাখা মার্কায় ভোট দেবেন।”

এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজীপুর মহানগর সভাপতি ফাইজ উদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি এম এ হানিফ সরকার, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, সহকারী সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম সাইদুর রহমান, প্রচার ও দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক এস এস ওয়াহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক, যুব অন্দোলনের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। ৫৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন, সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আরো রয়েছেন-আজমত উল্লা খান (আওয়ামী লীগ), এমএম নিয়াজ উদ্দিন (জাতীয় পার্টি), মো. রাজু আহমেদ (জাকের পার্টি), আতিকুল ইসলাম (গণফ্রন্ট) এবং তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, সরকার শাহনুর ইসলাম ও হারুন অর রশীদ।