সোহেল হত্যায় প্রভাবশালী ব্যক্তির ইন্ধন, অর্থ ও অস্ত্রের যোগান রয়েছে বলে শুরু থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছে।
Published : 22 Nov 2022, 12:08 PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল হত্যাকাণ্ডের এক বছর গড়ালেও মূল পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার।
সোহেলের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশসহ তাদেরকে গ্রেপ্তারে ‘গড়িমসি’ করা হচ্ছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য, দ্রুতই পরিকল্পনাকারীদের নামসহ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
২০২১ সালের ২২ নভেম্বর নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন কাউন্সিলর ৫০ বছর বয়সী সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা।
সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আর হরিপদ সাহা (৫৫) নগরীর ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
জোড়া খুনের ঘটনার পরদিন ২৩ নভেম্বর রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম, তিন নম্বর আসামি সাব্বির সোহেল ও পাঁচ নম্বর আসামি মো. সাজন।
হত্যাকাণ্ডের শুরুর দিকে থানা পুলিশের পর এই জোড়া খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়াকে। নয় মাসের বেশি সময় মামলাটির তদন্ত করেছেন তিনি।
তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে বলে জেলা ডিবি পুলিশের ওসি রাজেশ বড়ুয়া জানান। বর্তমানে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শরীফ আলম।
আলোচিত এই জোড়া খুনের ঘটনার শুরু থেকেই নিহত সোহেলের পরিবারের সদস্যরা বলে আসছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইন্ধন দিয়ে এবং অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করিয়েছে।
শুরুতে বিষয়টি মানতে নারাজ হলেও ঘটনার ছয়মাস পর মামলাটির আগের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেছিলেন, তদন্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেউ আছেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি; তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।
তবে এই তথ্য দেওয়ার ছয় মাস পার হলেও এখনও নেপথ্যের ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ কাটছে না নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর।
সোমবার দুপুরে মামলার তদন্তের অগ্রগতির সম্পর্কে জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শরীফ আলম বলেন, “আমাদের তদন্তের কাজ প্রায় শেষ। ঘটনার পর উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি ফুটেজগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটির রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি।
“তবে এইটুকুই বলতে পারি- হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী একাধিক ব্যক্তি। তাদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। সব কিছু শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোপত্র দেওয়া হবে।“
খুনের নেপথ্যে থাকা ও সরাসরি অংশ নেওয়া সকলের নামই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হবে বলে তিনি জানালেও পরিকল্পনাকারীদের নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হননি তিনি।
আগের তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকাজে ভালো অগ্রগতি এনেছেন মন্তব্য করে শরীফ আলম আরও বলেন, “এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রির্পোট হাতে এসেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। ব্যালেস্টিক রির্পোটে উদ্ধার হওয়া পিস্তলের সঙ্গে গায়ে লাগা গুলি ম্যাচিং করেছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার ২ নম্বর আসামি ‘জেল‘ সোহেল, এজাহারবহির্ভূত আসামি ‘পিচ্চি‘ নাজিম ও রিশাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজাহারনামীয় সাতজন ও সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, ডিবি ও র্যাব। এখনও পলাতক রয়েছেন মামলার ১১ নম্বর আসামি রনি।
এদিকে বছর ঘুরলেও হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা এখনও সামনে না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খুনের এক বছর হয়ে গেল, অথচ এখনও পেছনের হোতাদের নামটা জানতে পারলাম না। এটা শুধু আমরাই নয়, পুরো কুমিল্লাবাসীর জন্য দুঃখজনক ঘটনা। অথচ পুলিশ চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সকল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারে।”
“খুনিরা যেভাবে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করেছে, সেটা থেকেই বোঝা যায় তাদের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছে। যোগ করেন রুমন।
নিহত কাউন্সিলর সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো. নাদিম বলেন, “পরিকল্পনাকারীদের নাম-পরিচয় জানতে আমরা আর কত অপেক্ষা করবো? খুনের পরিকল্পকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, এজন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।
“শুধু আমাদের পরিবারই নয়, কুমিল্লা নগরীর সর্বস্তরের মানুষ জানতে চায়, কারা অর্থ ও ইন্ধন দিয়ে এই জোড়া খুন করিয়েছে। ”
কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: ‘পেছনে জড়িতদের সামনে আনা হবে’
কুমিল্লার কাউন্সিলর সোহেল হত্যায় ২ আসামির স্বীকারোক্তি