কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ পরিবারের

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) হত্যার দুই মাস পেরোলেও এখনও ‘মূল পরিকল্পনাকারীরা ধারাছোঁয়ার বাইরে’ রয়ে গেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার। 

কুমিল্লা প্রতিনিধিআবদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2022, 07:18 AM
Updated : 22 Jan 2022, 07:19 AM

যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য, তদন্তের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তাকে সামনে আনা হবে।

গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা (৫৫)।

কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আর হরিপদ সাহা নগরীর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

পরদিন রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম, তিন নম্বর আসামি সাব্বির সোহেল ও পাঁচ নম্বর আসামি মো. সাজন।

শনিবার সকালে মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ আমার ভাইকে হত্যার দুই মাস হতে চলেছে। আমরা ঘটনার শুরু থেকেই বলেছি, এখনও বলছি, এই জোড়া খুনের পেছনে প্রভাবশালী কোনো মহলের হাত রয়েছে।

“কারণ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম টোকাই শ্রেণির সন্ত্রাসী। তারা টাকার জন্য সব কাজ করতে পারে। তারা যেভাবে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করেছে, সেটা থেকেই বোঝা যায় তাদের পেছনে অন্য কেউ রয়েছে।  না  হলে হত্যায় ব্যবহৃত এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনার টাকা তারা কোথায় পেল?”

রুমন আরও বলেন, “আমরা এখনও জানতে পারিনি খুনের পেছনে কারা! পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে অনেক আগেই খুনের পরিকল্পনাকারীদের নাম সামনে চলে আসত। মূলহোতাদের নাম পুলিশেরই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো উচিত ছিল। কুমিল্লা নগরীর মানুষ জানতে চায়, কারা অর্থ ও ইন্ধন দিয়ে এই জোড়া খুন করিয়েছে।”

“আমি বিশ্বাস করি, তদন্ত সংস্থা চাইলেই খুনের নেপথ্যের সবকিছু সামনে আনতে পারে। আমাদের ধারণা, পেছনের সব তথ্যই ডিবি পুলিশের কাছে আছে”, যোগ করেন মামলার বাদী।

কাউন্সিলর সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো. নাদিম বলেন, “আব্বুর খুনের পর আমাদের পরিবারের সব আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারের সবাই এখন জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছে। খুনের পরিকল্পকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, এজন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমরা এখনও তাদের নাম জানতে পারিনি।”

এ নিয়ে অনেকবার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে সৈয়দ নাদিম বলেন, “প্রতিবারই আমরা বলেছি, নেপথ্যে প্রভাবশালী কেউ আছে, তাদের নাম প্রকাশ করুন। কিন্তু এখনও তারা কারও নাম বলছে না। আমাদের মনে হচ্ছে, পর্দার আড়াল থেকে পরিকল্পনাকারীদের সামনে আনার সম্ভাবনা দিন দিন কমে আসছে।”

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। বলতে গেলে, মামলার সার্বিক অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এরপরও আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী কেউ থাকলে অবশ্যই তাদের সামনে আনা হবে।”

নিহতের পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “তাদের মন্তব্য, তারা বলতেই পারেন। কিন্তু আমরা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলতে পারছি না। সব প্রশ্নের উত্তর তদন্ত শেষেই জানা যাবে।” 

“আমরা নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি। এ ছাড়া উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রির্পোট এখনও হাতে পাইনি। আমরা মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। সবকিছু শেষ হলেই আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এজন্য আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে“, যোগ করেন মঞ্জুর কাদের।

পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার ২ নম্বর আসামি ‘জেল‘ সোহেল, এজাহারবহির্ভূত আসামি ‘পিচ্চি‘ নাজিম ও রিশাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজাহারনামীয় সাতজন ও সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব। এখনও পলাতক রয়েছেন মামলার ১১ নম্বর আসামি রনি।

ছয় বোনের এক ভাই হরিপদ সাহার পরিবারের কোনো সদস্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিসন্তান হরিপদ স্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে ক্যানসারে মারা যান। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় মারা যান তার মা। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা স্বীমার বাড়িতেই থাকেন।