কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: ‘পেছনে জড়িতদের সামনে আনা হবে’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও তাঁর সহযোগী আওয়ামী লীগকর্মী হরিপদ সাহাকে (৫৫) গুলি করে হত্যার পেছনে ‘প্রভাবশালী কোনো মহলের পরিকল্পনা’ থাকতে পারে বলে তদন্ত কর্মকর্তা ধারণা করছেন।

কুমিল্লা প্রতিনিধিআবদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2022, 06:58 AM
Updated : 23 Feb 2022, 06:58 AM

জোড়া খুনের তিন মাসের মাথায় মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তদন্তের শুরু থেকেই বলছি, যদি এই জোড়া খুনের পেছনে অন্য কেউ থাকে অবশ্যই তাকে সামনে আনা হবে।

“এরই মধ্যে আমরা তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এই জোড়া খুনের পেছনে অন্য কেউ আছেন। আমরা তাদেরকে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। খুব শিগগিরই তাদেরকে সামনে আনা হবে।”

তবে পেছনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য দিতে চাননি মঞ্জুর কাদের।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের বিষয়ে তদন্ত করছি। যে কারণে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্তের মাধ্যমেই সব সামনে আসবে।”

গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা (৫৫)।

কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আর হরিপদ সাহা নগরীর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

পরদিন রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম, তিন নম্বর আসামি সাব্বির সোহেল ও পাঁচ নম্বর আসামি মো. সাজন।

পুলিশ ঘটনার শুরু থেকেই শাহ আলমকে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ বলে উল্লেখ করলেও সোহেলের পরিবার দাবি করে আসছিল, এর পেছনে ‘প্রভাবশালী কোনো মহলের হাত’ রয়েছে।

মঙ্গলবার মামলার বাদী কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পার হয়েছে। মনে হচ্ছে, সোহেল ভাইয়ের নাম মুছে যাচ্ছে। ঘটনার শুরু থেকেই বলেছি, এখনও বলছি, এই জোড়া খুনের পেছনে প্রভাবশালী কোনো মহলের হাত রয়েছে। কিন্তু কষ্টের বিষয় পুলিশ এখনও তাদের সামনে আনল না। অথচ পুলিশ চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করে সামনে আনতে পারে।

“খুনিরা যেভাবে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করেছে, সেটা থেকেই বোঝা যায় তাদের পেছনে প্রভাবশালী অন্য কেউ রয়েছে”, যোগ করেন বাদী।  

কাউন্সিলর সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো. নাদিম বলেন, “শুধু আমাদের পরিবারই নয়, কুমিল্লা নগরীর সর্বস্তরের মানুষ জানতে চায়, কারা অর্থ ও ইন্ধন দিয়ে এই জোড়া খুন করিয়েছে। আমাদের পরিবারের সব আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছি। অথচ খুনের পরিকল্পকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।”

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের আরও বলেন, “নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও পাইনি। তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রিপোর্ট প্রস্তুত হয়ে গেছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ে যাব ওই রিপোর্ট আনতে।

“আমরা মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি এবং মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। সবকিছু শেষ হলেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এ জন্য আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে”, যোগ করেন ডিবি কর্মকর্তা।

পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার ২ নম্বর আসামি ‘জেল’ সোহেল, এজাহারবহির্ভূত আসামি ‘পিচ্চি‘ নাজিম ও রিশাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজাহারনামীয় সাতজন ও সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব। এখনও পলাতক রয়েছেন মামলার ১১ নম্বর আসামি রনি।

অপরদিকে ছয় বোনের এক ভাই হরিপদ সাহার পরিবারের কোনো সদস্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিসন্তান হরিপদ স্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে ক্যানসারে মারা যান। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় মারা যান তার মা। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা স্বীমার বাড়িতেই থাকেন। 

আরও পড়ুন-