মায়ের জবানবন্দি প্রত্যাহারে আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
Published : 30 Sep 2022, 12:55 AM
খুলনায় বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে আগে দাবি করলেও এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসে মরিয়ম মান্নান বললেন, তার মা আত্মগোপনেই ছিলেন।
আদালত ও পুলিশের কাছে রহিমা বেগম ‘অপহৃত হয়েছিলেন’ বলে নিজে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহারে আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তার মেয়ে।
খুলনার মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে গত ২৭ অগাস্ট নিখোঁজ হন ৫৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। এরপর থেকে তার সন্ধান করছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার বোন।
এনিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। মরিয়মের কান্নার ছবি সবার হদয়ও ছুঁয়ে যায়।
প্রথমে ফুলবাড়িয়ায় একটি লাশ দেখে তা নিজের মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম। অন্যদিকে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন তার বোন।
এর মধ্যেই ২৯ দিন পর ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ। রহিমা অপহৃত হওয়ার দাবি করলেও ওই বাড়ির লোকজনের বক্তব্য ছিল ভিন্ন।
আর মামলার তদন্তকারী পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলে আসছেন, রহিমা নিরুদ্দেশ থাকাকালে বান্দরবান ও ফরিদপুরে ছিলেন এবং তিনি আত্মগোপনে ছিলেন বলেই তারা মনে করেন।
এরমধ্যেই মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসা মরিয়ম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মায়ের বান্দরবান ও ফরিদপুরে যাওয়ার তথ্য পেয়েও তখন তা ‘অবিশ্বাস’ করেছিলেন তিনি। তবে এখন তিনি নিশ্চিত, তার মা রহিমা বেগম অপহৃত হননি, তিনি আত্মগোপনেই ছিলেন।
“আমরা যদি জানতাম মা আত্মগোপনে, তাহলে তাকে খুঁজতে এত জায়গায় যেতাম না।”
বস্তাবন্দি লাশটি রহিমার? নিশ্চিত হতে খুলনা থেকে ফুলপুরে মেয়েরা
‘রহিমা বোয়ালমারী এসে আশ্রয় চান, পরিবারকে জানালে বিরক্ত হয়’
মুখ খুলেছেন রহিমা বেগম, দাবি ‘অপহরণ’
আদালতে রহিমার জবানবন্দি, থাকবেন মেয়ের জিম্মায়
উদ্ধারের পর দেওয়া মায়ের জবানবন্দি পরিবর্তনের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান মরিয়ম।
এদিকে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর উদ্ধারের সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন রহিমা বেগম।
“সুস্থ মানুষ হিসেবেই পরদিন তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তবে তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার অসঙ্গতি আছে। এখন পর্যন্ত রহিমা বেগমের দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিমূলক।”
মান্নান আরও বলেন, “রহিমা বেগম যে সময় আত্মগোপনে যান, সে সময়ে তার তৃতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কাছেই ছিলেন। যে কারণে বেল্লাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। তাকে আমরা রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছি।”
পিবিআই খুলনার সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রহিমা বেগম আদালতে ২২ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, আমাদের কাছে যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেই তথ্য আমরা যাচাই করে দেখেছি।
“তাকে অপহরণের বিষয়টি আমাদের কাছে সঠিক প্রমাণ হয়নি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত তাদের যে বিরোধ আছে, তাতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য তিনি এসব করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।”
পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, “মামলাটি যদি আমাদের কাছে সত্যি মনে না হয় এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে যদি মনে হয় এটি মিথ্যা মামলা, তাহলে আইন অনুযায়ী বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তাছাড়া মরিয়মের বোন আদুরি আক্তারের মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তদন্তে যদি তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে তারাও আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে জানান তিনি।