স্কুলমাঠে ছাত্রলীগের সম্মেলন, শিক্ষার্থীদের আসতে বাধ্য করার অভিযোগ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার লতিফুল নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলন হয়।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 06:22 PM
Updated : 11 Jan 2023, 06:22 PM

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার মিয়া বাজার লতিফুল নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উজিরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সম্মেলন ও ওয়ার্ড কমিটির পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়।

এতে মিয়াবাজার ডিগ্রি কলেজ, মিয়াবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মিয়াবাজার তোষণ রফিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলের পোশাক পরিহিত অবস্থায় অংশ নিতে দেখা গেছে। চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই কাছাকাছি। 

সম্মেলনের জন্য মাঠে দেওয়া অধিকাংশ চেয়ারে এসব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও সেখানে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, তাদের আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।     

তবে সম্মেলনের অতিথি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সোবাহান ভূঁইয়া হাসান বলেন, “ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানটি শুরু হয় মূলত বেলা ১২টার দিকে আর ২টার দিকে শেষ হয়ে যায়। এর আগে ওই চারটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয়েছে বলে জেনেছি।

“আর ছাত্রলীগ তো শিক্ষার্থীদেরই সংগঠন। এজন্য ছাত্রলীগকে ভালোবেসে অনেক শিক্ষার্থী সম্মেলনস্থলে এসেছে। আমি বিষয়টি অস্বীকার করছি না।”

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের সব স্থানেই স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত থাকে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমি এখানে অন্যায়ের কিছু দেখছি না। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কাউকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে, এমন কথা আমি শুনিনি।”

সম্মেলন উপলক্ষ্যে সকাল ১০টার দিকেই আসতে শুরু করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এটি শেষ হয় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন।

এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সোবাহান ভূঁইয়া হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তৌফিকুল ইমলাম সবুজ উপস্থিত ছিলেন।

মিয়াবাজার ডিগ্রি কলেজের তিনজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ বাবুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির নেতারাই শিক্ষার্থীদের এই সম্মেলনে আসতে বাধ্য করেছেন।

বুধবার কলেজে কোনো ক্লাসই হয়নি বলে জানায় ওই শিক্ষার্থীরা। তারা অনেকটা ‘বাধ্য হয়েই’ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সেখানে ছিল।

লতিফুল নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও মিয়াবাজার তোষণ রফিক বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সকালে স্কুলে আসার পর শিক্ষকরা তাদেরকে সংসদ সদস্যের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বলেন। তাই তারা সেখানে এসেছে।  

ক্ষোভ প্রকাশ করে শহিদুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, “ছাত্রলীগের একটি ইউনিয়ন সম্মেলনের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়া দুঃখজনক ব্যাপার। আর শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নিয়ে বসিয়ে রাখার বিষয়টিও কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।”

সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এই সম্মেলন করা যেত বলে অভিমত দেন এই অভিভাবক।

তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিয়াবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, “আমরা ক্লাস বন্ধ রাখিনি; তবে বুধবার কোনো ক্লাসই নিতে পারেনি ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে লাগানো মাইক আর সাউন্ডবক্সের কারণে। অতিরিক্ত আওয়াজের কারণে কোনোভাবেই ক্লাস নেওয়া সম্ভব ছিলো না।

“আর আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই রাখতে। তবে সেখানে (সম্মেলনস্থলে) যখন গান (সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) আরম্ভ হয়, তখন অনেক শিক্ষার্থী চলে যায় গান শুনতে।”

মিয়াবাজার লতিফুল নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়ালি উল্ল্যাহ বলেন, “আমরা ক্লাস বন্ধ রাখিনি। সকালবেলা ক্লাস হয়েছে। আর আমি এ নিয়ে কথা বলে ঝামেলায় পড়তে চাই না। আপনি বিষয়টি নিয়ে মিয়াবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গে কথা বলেন।“

সন্ধ্যায় মিয়াবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল বলেন, “আমি একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রয়েছি। এ নিয়ে পরে কথা বলবো আপনার সঙ্গে।“

এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তৌফিকুল ইমলাম সবুজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এসব প্রসঙ্গে জানতে রাতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মীর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।