“আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত এক হয়ে যায় আদিবাসীর সম্পত্তি নিতে,” বললেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের পাবনার সভাপতি আশিক চন্দ্র বাণিয়াণ।
Published : 08 Aug 2023, 11:30 PM
পাবনার আটঘড়িয়ার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বয়স পঞ্চাশের লতা রানী বাগদী শ্বশুরের কাছ থেকে বাজারের মধ্যে ছয় শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। জমিটি বেশ দামি। নিজে কৃষিকাজ করে অসুস্থ স্বামী, তিন ছেলে আর এক মেয়ের সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু জমি বিক্রির চিন্তা করেননি কখনও।
এলাকার কথিত এক আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের পর সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বড় ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর চিন্তা করেন তিনি। ধারদেনা করে তিন লাখ টাকাও দেন। কিন্তু সেটাই তার জীবনের ‘কাল’ হয়ে উঠে। মা-ছেলেকে জিম্মি করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেই ছয় শতাংশ জমি লিখে নেয় সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীটি।
লতা রানী সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, “বিদেশ যাওয়ার কাগজপাতি সই করা লাগবি বলি, আমাক আর ছেলেক মাইক্রোত করি ডাকি নি গেল। সুন্ধার দিকে রেসটারি (রেজিস্ট্রারি) অফিসে নি যায়। অ-ছাপানি (ছাপাহীন, সাদা) কাগজ দিয়ে বলে তোমাক সই করতে হবে এখানডাতে।
“আমি বলি, না আমি তো জমি সই করব না। তখন বলল, জমি সই করি দে, নয়তো ম্যায়ে-বেটাক শেষ করি দেব। অস্ত্র ধরি, পিস্তল ধরি জোর-জুলুম করি আমারে জমি সই করি নিল।”
তারপর ছেলেকে একদিকে আর লতা রানীকে একদিকে নিয়ে যায় জমি দখলকারীরা। লতা রানীর ভাষ্যমতে, জমিটি খারিজ করতে সময় লাগে। তখন যেন কেউ আপত্তি করতে না পারে তার জন্য তাকে গাজীপুরে ১০ মাস ১০ দিন আটকে রাখা হয়। আর ছেলেকে আটকে রেখে সৌদি আরবের বদলে পাঠানো হয় মালদ্বীপে। গাজীপুর থেকে স্থানীয়দের মাধ্যমে উদ্ধার হয়ে তিনি পাবনার বাড়ি ফেরেন। ছয় জনের বিরুদ্ধে পাবনার আদালতে মামলা করেন।
লতা রানী বলেন, “আমার জীবনে এরম আন্ধার নামায় দিবে, আমি স্বপ্নেও জানিছিলাম না। ট্যাকা-পয়সা দি মামলা ঘুরাই দিসে।”
জমি নিয়ে এমন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা শোনা যাবে উত্তর-জনপদের সাঁওতাল, ওঁরাও, মুণ্ডা, কোল, ভীল, কডা, কড়াসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছ থেকেই। এসব জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, সমতলের এই নৃগোষ্ঠীগুলোর ভূমি সমস্যার মূলে রয়েছে তাদের জন্য একটি আলাদা ভূমি কমিশন না থাকা; যা পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা সমতলের নৃগোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশনের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো সরকার সেটি আমলে নিচ্ছে না। আর এই সুযোগে তারা জমি হারাচ্ছে।
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে ৫০টি নৃগোষ্ঠীর সাড়ে ১৬ লাখের বেশি মানুষ রয়েছে। যদিও নৃগোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, এ সংখ্যা আরও বেশি। এই জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তিন পার্বত্য জেলার বাইরে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং গারো পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর দেখভালের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় থাকলেও সমতলের জন্য তা নেই; সেই দাবি রয়েছে অনেকদিন ধরেই।
এসব জাতিগোষ্ঠী; যারা ‘জনজাতি’ হিসেবেও পরিচিত তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কার-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আচার-উৎসব-অনুষ্ঠান, ভাষা ও জীবনের বিচিত্র বিন্যাস ও ব্যাপ্তি। সমতলের নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি-ঐতিহ্য হারাচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে আর তাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাতের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, গত ৬৪ বছরে সমতলের ১০টি নৃগোষ্ঠীর ২ লাখ ২ হাজার ১৬৪ একর জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যার দাম প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷
জবরদখল, উচ্ছেদ, জাল দলিল এগুলো করে নৃগোষ্ঠীর জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। জাতিতে সাঁওতাল এই নেতার দাবি, পাহাড়ের চেয়ে সমতলের আদিবাসী দ্বিগুণের বেশি।
“কিন্তু পাহাড়ের আদিবাসীদের উন্নয়ন বোর্ড আছে, জেলা পরিষদ আছে, আঞ্চলিক পরিষদ আছে, শরণার্থীদের জন্য আলাদা টাস্কফোর্সও আছে। আর আমাদের জন্য কিছুই নাই, অথচ জনসংখ্যায় বেশি আমরা, অনেক বেশি। কত বড় বৈষম্য!
রবীন্দ্রনাথ বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময় বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে ভূমি কমিশন করে দেবে। তিন টার্ম চলে গেল, হয়নি। এখন তো উল্টো কোটা বাদ, আমরা উচ্চ চাকরি থেকে পুরোটাই বঞ্চিত হই।”
পাহাড়ের জাতিগোষ্ঠীগুলো জমির ‘সামাজিক মালিকানা’ দাবি করলেও সমতলের ‘ভূমিপুত্ররা’ তাদের ‘পৈতৃক সম্পত্তি’র মালিকানা দাবি করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে অনেক আদিবাসী ফিরে এসে জমি দখলে পায়নি। নতুন জরিপে দখলদারের নামে জরিপ হয়ে গেছে। আদিবাসীদের পক্ষে মামলা করে এই জমি উদ্ধার করা খুব কঠিন। সমতলের জন্য ভূমি কমিশন এই কারণে চাই আমরা,” বলেন রবীন্দ্রনাথ।
সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বাদে বিভাগ অনুযায়ী বরিশালে নৃগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ৪ হাজার ১৮১ জন, ঢাকায় ৮২ হাজার ৩১১, খুলনায় ৩৮ হাজার ৯৯২, ময়মনসিংহে ৬১ হাজার ৫৫৯, রাজশাহীতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯২, রংপুরে ৯১ হাজার ৭০ ও সিলেটে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৪ জন।
“জমিডা নিতে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসাইছে”
পাবনার আটঘরিয়ার মাছপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া ও খিজিরপুড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার নৃগোষ্ঠীর বসবাস। খিজিরপুরের ওয়াজিদ কুমারের নাতি অতুল কুমার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রায় চার বিঘা জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই জমি লিখে নেওয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এখন জমি তো দূর; মামলা চালাতে গিয়ে ভাতও জুটাতে পারছেন না ঠিকমত।
অতুল কুমার বলছিলেন, “জমিডা নেওয়ার জন্য অস্ত্র দিয়ে আমাকে ফাঁসাইছে। আমি মাঠের কাজ করি, মাছ মারি, ক্যুচি মারি। অস্ত্র কোথায় পাব? ঘরের চকির তলে ঝাঁঝরের মধ্যে রাখছে। কী অস্ত্র, আমি নামও জানি না, জীবনে ওইসব কুনোদিন দেকিনি।”
পাশের চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল কেশবপুরে ৬০০ থেকে ৭০০ নৃগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। সেই গ্রামের মুংলা মুড়ালীর ছেলে চল্লিশোর্ধ্ব শ্রী কর্ণ কুমার মুড়ালী পেশায় কৃষিজীবী।
নিজের জমির জটিলতার কথা উল্লেখ করে কর্ণ কুমার বলেন, “আমার দাদু রাজেন্দ্রনাথ মুড়ালীর নামে ৭ একর ৫১ শতাংশ জমির সিএস, আরএস, ও এসএ তিনডা রেকর্ডিং। দাদু মারা যাওয়ার পরে বাপ-কাকারা বুঝত না। রিলিপ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে ভূয়া কাগজ করে এলাকার ভূমিদস্যু সেই জমি দখল করে নেয়।
“যারা জমি দখল করছে তারা সংখ্যায় বেশি। আমরা কম বলে পরে ওই জমিতে যাওয়ার সাহসও করতে পারি নাই। দখলদাররা বলছে, আমার দাদু নাকি বিক্রি করিছে। কিন্তু আমরা জানি না।
কর্ণ কুমার বলেন, “আমি ২০১২ সালে পাবনা জজ আদালতে জমির বাটোয়ারা মামলা করি। এরপরে ২০১৭ ও ২০১৯ দলিল জাল এই মর্মেও দুইটা মামলা করি। এরপর থানা তদন্ত এসে আমার বিপক্ষে দিয়ে রিপোর্ট দেয়। পরে আমি নারাজি দিয়ে পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই। পরে রেজাল্টে জাল প্রমাণ হলে ওয়ারেন্ট হলে আসামিরা জামিন নেয়।”
পাবনা জেলায় নৃগোষ্ঠীর জমি সংক্রান্ত এমন জটিলতার আরও ২০ থেকে ২৫টির মত ঘটনা আছে বলে জানান আশিক চন্দ্র বাণিয়াণ।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের পাবনা জেলার সভাপতি তিনি। তার বক্তব্য, “পাবনায় মূলত জমিজমার এসএ, ডিএস আমাদের নামে আছে। আরএসএ আসি অন্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। মনে করেন, আমার বাবার নামে জমি আছে। তিনি মারা গেছে ১৫-২০ বছর হয়ে গেছে। বাবা বেঁচে থাকতে বলেনি, এখন এসে তারা একটি দলিল নিয়ে বলে, তোমার বাবা জমি বিক্রি করেছে। বাবার স্বাক্ষরের সাথে মিল খায় না।”
“এককথায় তারা গায়ের জোরেই নিয়ে যাচ্ছে। কোর্টে গেলে নিয্য বিচারটা পাই না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত এক হয়ে যায় আদিবাসীর সম্পত্তি নিতে। সদর উপজেলার ভারাড়া ইউনিয়নে আমাদের সাড়ে ৯ বিঘা জমি এসএ, ডিএস, আরএস তিনটাই আমাদের আছে। খাজনা-খারিজ করছি কিন্তু জমি দখলে যাতে পারছি না প্রভাবশালীদের জন্য।”
কেউ কেউ জমি বিক্রিও করে সত্য; কিন্তু তা নিয়ে কথা বলা হয় না বলেও জানান আশিক।
“কোর্টে চার দুফা হ্যারে গ্যাছে, কিন্তু এখনও ভেজাল করিচ্চে”
সমতলের নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বসবাস করেন রাজশাহী অঞ্চলে। রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, বগুড়া জেলায় সাঁওতাল, রাজবংশী, গঞ্জু, ওঁরাও, কোচ, ভুঁইমালি, কোল, খুমি, মুন্ডারি, রাজোয়ার, কড়া, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী, কর্মকার, বেদিয়া মাহাতো, খিয়াং, বম (বনজোগী), তেলি, তুরি জাতিগোষ্ঠীর বাস।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ঝালঝালিয়া এলাকায় প্রায় এক হাজার নৃগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। সেখানে ওঁরাও সম্প্রদায়ের লোকজনের প্রধান্য। অনেকেরই জমি বেদখল হয়ে গেছে, কেউ মামলা করে আদালতের রায় পেলেও জমিতে যেতে পারছেন না। মেরে ফেলার ভয়-ভীতি দেখায় দখলকারীরা।
ঝলঝলিয়ার যতীন্দ্রনাথ ওঁরাও বলেন, “২০২০ সালে ভুয়া একটা জমিদার (দলিল) লিয়ে আচ্চে ওরা, টাকা-পয়সা দিয়্যা, ভূয়া খারিজ-টারিজ কর্যা। পরে আমি কেস কোরল্যাম। পরে চার দুফা হ্যারে গ্যাছে আদালতে; কিন্তু এখনও ভেজাল করিচ্চে।
“আমি বাড়ি না থাকায়, আমার বয়া হালের (৮০ শতাংশ) ধান ক্যাটে লিছে। পরে কোর্টে বিচ্যারে ধানের টাকা দিতে কইচে, আজ পরযন্ত টাকা দেয়নি। এইটুকুত এরম সমস্যা আরও দুই-তিনজনের হছে। কিন্তু তারা ভয়-ভীতিতে কোর্টে লড়েনি।”
গুরুদাসপুর চাপিলা ইউনিয়নের নওপাড়া, খামার পাথুরিয়া এলাকার ১২০টি নৃগোষ্ঠীর পরিবারের বসবাস। নওপাড়ার উপেন্দ্রনাথ সিংয়ের ছেলে দীপক সিংয়ের ভাষ্যমতে, তার দাদা রবীন্দ্র সিংয়ের কাছ থেকে বাড়ি বানানোর কথা বলে ১০ কাঠা জমি নেয় একটি গোষ্ঠী। পরে আর তারা সেই জমি ছাড়েনি। এখনও সেই জমি দখলে রেখেছে।
দীপক সিংয়ের দাবি, “নওপাড়ার বিলাস সিংয়ের ১২ থেকে ১৫ কাঠা এবং খামার পাথুরিয়ার জুমলের ১ বিঘা জমির কাগজপাতি সবই আছে, কিন্তু জোর করে খাচ্ছে। জমি ফিরায় চালে বলে, কিছু টাকা পয়সা দিচ্ছি ছ্যাড়ে দাও। ভয়-ভীতি দেখায় খাচ্ছে।
“আমাদের চাপিলাতে (কলাকান্ত, ডুবারপাড়া, চন্দ্রপুর, চালা ও নাজিরপুরের বৃগড়িলা) কিছু কিছু জায়গায় আমাদের আদিবাসী লোকদের থাকতেই দিচ্ছে না। যেখানে দুই-তিন ঘর আছে, জানে তাদের হুমকি-ধামকি দিলেই তো ইন্ডিয়া চলে যাবি। প্রত্যেকটা গ্রামেই আদিবাসীদের জমিজমা নিয়ে কমবেশি ঝামেলা আছে।”
নাটোর সদরের শংকরভাগ ‘আদিবাসী পল্লী’র সুজিত কুমার তেলি বলেন, “সংখ্যালঘু হওয়ায় আদিবাসীদের জমির সমস্যা এখনও জটিল। কাগজপত্র থাকার পরও আমার বড় ভাই বীরেন তেলির ১০ শতক জমি স্থানীয় প্রভাশালীরা জোর দখল করে খাচ্ছে।”
শংকরভাগ বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “নাটোরের আদিবাসীদের অনেক জমিজাতি ছিল। কেউ বিপদে পড়লে আদিবাসীদের কাছে ঘর তোলার জায়গা চাইলে দিত তারা। এখন ধরেন সেই লোকের ছেলে নাতি-পুতি হইছে। তাদের ১০ কাঠা ঘর তোলার জন্য দিলে তারা এখন আরও ২০ কাঠা দখল করে খাচ্ছে।”
জমি নিয়ে ঝামেলা-জটিলতার কথা বলেছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবনীপুরের আম্বইল বাগানপাড়া এলাকায় নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারাও। সেখানে প্রায় ৬০ ঘর নৃগোষ্ঠী বাস করেন।
সেই পল্লীর বাসিন্দা শ্রী সন্তোষ সিং বাবু জানান, আম্বইল মৌজায় তিনটা দাগে তার বাবা প্রয়াত ভগীরথ সিংয়ের তিন একর জমি রয়েছে। তারা সেখানেই চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জমির রেকর্ড মিস থাকায় সংশোধন চেয়ে তিনি শেরপুর আদালতে মামলা করেন। তখন পাল্টা মামলার শিকার হন তিনি।
সন্তোষ সিং বলেন, ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বরে জোর করে তার জমিতে হালচাষের চেষ্টা করেন বিবাদীরা। পরে ৮ জানুয়ারি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আম্বইলের সিংদের ওপরে হামলা করা হয়। অনেককে মারধর করে প্রভাবশালীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে লোকজনের চলাচল বন্ধ করে দেয়।
“পরে এসপি সাহেব পুলিশ ক্যাম্প করে দেয়। দেড় মাসে এলাকার পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়। পরে আমরা মামলা করলে, ওরা আবার কাউন্টার মামলা করে। এখনও আমরা ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারি না। জমি আমার দখলে আছে কিন্ত তারা দখলে নিতে বার বার হামলা করে”, বলেন সন্তোষ সিং।
আলাদা ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় চান নেতারা
দীর্ঘদিন ধরেই নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছেন রঘুনাথ এক্কা ও মুন্ডা কালিদাস। তারা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার নেতৃত্বে রয়েছেন। দুজনই বলছিলেন, তাদের সম্প্রদায়ের সহজ-সরল মানুষগুলোর জমি নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। কেউ এক একর বিক্রি করলে দেখা যায় নয় একর বেহাত হয়ে গেছে।
তারা মনে করেন, আলাদা একটা ভূমি কমিশন থাকলে এগুলো কমবে। এখন একটা নিয়ম আছে, জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া জমি বিক্রি করা যাবে না। এই আইনের কারণে নৃগোষ্ঠীর জমি কিছু টিকে আছে। এই আইনটা না থাকলে নৃগোষ্ঠীর মানুষের আরও বড় ক্ষতি হত। ফলে আলাদা ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁইয়া বলেন, “আমি আদিবাসীদের নিয়ে একটা সভা করেছি। তাদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। পৃথক ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের দাবিটা জাতীয় ইস্যু, সরকারের বিষয়। আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা করছি।
“আদিবাসীদের উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনেই রয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। তাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা অবশ্যই আমরা পর্যালোচনা করছি। পলিসি লেভেলে আলাপ শেষে, তারপর সরকার চাইলে সিদ্ধান্ত নিবে, সেভাবে আমরা বাস্তবায়ন করব।”