বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যুর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনেছে পরিবার; বিষয়টি তদন্তে কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ নভেম্বর হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিখানা এলাকার রেনু বেগম। এর তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এই অভিযোগ করেন রেনু বেগমের ছেলে মো. আরাফাত চৌধুরী।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলনে রেনু বেগমের স্বামী আবুল কালাম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত অভিযোগে আরাফাত চৌধুরী বলেন, “গত ১৫ আগস্ট আমার মা রেনু বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান এম সালেহউদ্দিন ২১ আগস্ট রাউন্ডের সময় রেনু বেগমকে আরও ২/৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরামর্শ দেন। এরপর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্বান্ত দেবেন বলে জানান।“
আরাফাত অভিযোগ করেন, “কিন্তু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মুশফিকুজ্জামান ওইদিন রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।”
এ সময় আরাফাত বিভাগীয় প্রধানের নির্দেশনার কথা উল্লেখ চিকিৎসক মুশফিকুজ্জামানের কাছে ছাড়পত্র দেওয়ার কারণ জানতে চান। তখন চিকিৎসক খারাপ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেন আরাফাত।
তিনি আরও বলেন, “এরপর ১৭ নভেম্বর রেনু বেগমকে আবারও হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। ১৯ নভেম্বর মুশফিকুজ্জামান রোগী দেখে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।”
এর প্রতিবাদ করলে চিকিৎসক আবারও খারাপ ব্যবহার করেন অভিযোগ করে আরাফাত বলেন, “মনে কষ্ট নিয়ে মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসি। ২৭ নভেম্বর রেনু বেগম আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টায় আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক কয়েকটি পরীক্ষা দেন। কিন্তু তখন টাকা না থাকায় পরদিন সকালে পরীক্ষাগুলো করানোর সিদ্ধান্ত হয়।”
“২৮ নভেম্বর সকালে চিকিৎসক মুশফিকুজ্জামান রোগীকে দেখে ছাড়পত্র দিয়ে ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেতে বলেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় রেনু বেগম কয়েকবার বমি করেন, শরীরে ঘেমে যায় এবং হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। উপায় না দেখে তাকে নগরীর রূপাতলী 'আবদুল্লাহ হাসপাতালে' নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক না থাকায় ভর্তি করা হয়নি।”
আরাফাত বলেন, “আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২৮ নভেম্বর রেনু বেগমকে ফের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৯ নভেম্বর সকালে রেনু বেগম মারা যান।”
এসব বিষয় উল্লেখ করে রেনু বেগমের পরিবার জেলা সিভিল সার্জন এবং কোতোয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দিতে যায়। কিন্তু সেখান থেকে তাদের হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ৩০ নভেম্বর হাসপাতালের পরিচালককে অভিযোগ দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরাফাত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, “আমার মা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ভবিষ্যতে আর কোনো রোগীর সঙ্গে যেন এমন আচরণ না করা হয় এবং কেউ যেন চিকিৎসার অবহেলায় মারা না যান।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হৃদরোগ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মুশফিকুজ্জামান বলেন, “আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তা শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আমি লিখিত জবাব দিয়ে দিয়েছি।”
অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান মুশফিকুজ্জামান।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “রোগীর স্বজনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেডিসিন-২ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অমলেন্দু বিশ্বাসকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ডা. অসীম কুমার ও ডা. মানবন্দ্রে রায়।”
“এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়নি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, “এখন অভিযোগকারীদের কাছ থেকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারিনি।”