প্রথমবারের মত শহরের প্রধান স্টেডিয়ামে বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে জলকেলির।
Published : 16 Apr 2024, 09:51 PM
মারমা সম্প্রদায়ের সংগ্রাইয়ের জলকেলির মধ্য দিয়ে পাহাড়ের নৃগোষ্ঠীগুলোর বর্ষবরণের উৎসবের সমাপ্তি হয়েছে।
পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণে নৃগোষ্ঠীগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনের উৎসব পালন করলেও একে ঘিরে টানা এক সপ্তাহ জুড়ে পাহাড়ে চলে লাগাতার অনুষ্ঠান। বছরের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক উৎসবে পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও মেতে উঠে আনন্দে।
প্রতিবছর নিয়ম করে মারমা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই সাধারণত আয়োজন করা হয় সাংগ্রাই। তবে এই প্রথমবারের মত শহরের প্রধান স্টেডিয়ামে বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে জলকেলির।
ফলে সহজ যোগাযোগ আর সুপরিসর স্থানের কারণে তীব্র গরম উপেক্ষা করেও বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে উঠে পুরো আয়োজন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঐহিত্যবাহী ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু হয় জলকেলির আনুষ্ঠানিকতা। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দুই দলে ভাগ হয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করার পাশাপাশি পুরোনো বছরের সব দুঃখ, গ্লানি মুছে ফেলার আয়োজনে মেতে ওঠেন। তরুণ-তরুণীদের বিশ্বাস, মৈত্রী জলবর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের অন্তরাত্মা শুদ্ধ হয়।
পাহাড়ের তিন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত কয়েক হাজার মারমা নারী-পুরুষ একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিনভর উৎসব পালন করেন। মৈত্রী জলবর্ষণ ও নাচ-গানের মাধ্যমে নিজেদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।
রাঙামাটির চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) আয়োজনে উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। অতিথি ছিলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি পুরো দেশের অহংকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যের মতোই এর বর্ণিল ও নান্দনিক সংস্কৃতির তা সবার জন্যই গর্বের।
সবার সম্মিলিত ঐক্যের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বহাল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি নতুন বছর ‘হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত’ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যাশার কথাও বলেন প্রতিমন্ত্রী।
সাংগ্রাই উৎসবে যোগ দেওয়া চট্টগ্রামে কর্মরত ব্যাংকার মতিউর রহমান মানিক বলেন, “আমি রাঙামাটির সন্তান হলেও শহর থেকে দূরে প্রান্তিক জনপদে সাংগ্রাই জলোৎসব হওয়ায় সরাসরি দেখার সুযোগ পাইনি। এবার শহরের প্রাণকেন্দ্রেই এই আয়োজন শহরবাসীর জন্য একটি বড় সুযোগ করে দিয়েছে। একটি সামাজিক উৎসব কতটা সম্প্রীতির আর উচ্ছ্বাসের হতে পারে, তা সাংগ্রাইয়ের এই জলকেলি উৎসব না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।”
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মারমা সংস্কৃতি সংস্থা-মাসস সভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, “রাঙামাটির প্রশাসন ও নাগরিকদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশাল এই আয়োজনটি সফল করা সম্ভব হয়েছে।”
সব জনগোষ্ঠীর মানুষকে এক সঙ্গে নিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরির উদ্দেশ্যেই এমন আয়োজন বলে জানান তিনি।