সিলেট মহানগরীতে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় দলটির ২৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট জাহিদ সারওয়ার সবুজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান।
রোববার রাতে নগরীর আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় গাড়ি আটকে ছুরিকাঘাতে জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক কামালকে হত্যার পর ভাঙচুরের অভিযোগে চারজনকে আটক করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তারা হলেন ইশতিয়াক আহমদ রাজু, বদরুল ইসলাম নজরুল, মিলাদ আহমদ ও রাজীব আহমদ। তারা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির ২৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার আগেই চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দিনে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
এখন এই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী জাহিদ সারোয়ার সবুজ বলেন, “বিএনপির একটি মিছিল থেকে রোববার রাতে নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়। এতে আমরা সবাই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।”
তবে ভাঙচুরকারীদের চিনতে না পারায় এজাহারে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান বাদী।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, “যারা ভাঙচুর করেছেন, তাদের সবাইকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”
তবে হয়রানির জন্যই এই মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “কামাল হত্যার পর নগরে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয়। দলের নেতা মারা যাওয়ায় দলের সবাই মর্মাহত। কেবল হয়রানির জন্য এই মামলা করা হয়েছে।“
এদিকে কামাল হত্যার ঘটনায় দুদিন পর মঙ্গলবার রাতে তার ভাই ময়নুল হক বাদী হয়ে আজিজুর রহমান সম্রাটসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে নগরীর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপি নেতা কামাল (৪৫) নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা এবং সিলেট ল কলেজের সাবেক জিএস ছিলেন।
পুলিশ জানায়, কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল। বড়বাজারের ১১৮ নম্বর বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে তাকে গাড়ি থেকে নামায় একদল লোক।
পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কামাল মারা যান জানিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামছুল ইসলাম বলেন, কামালের দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাম হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে দুইটি, বুকের বামপাশে একটি ও বাম পায়ে ছয়টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ব্যবসা এবং নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আজিজুর রহমান সম্রাটের আত্মীয়কে সৌদি আরব পাঠানো নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সম্রাট ২১ অক্টোবর কামালসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এর জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: