ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট শঙ্কার ৩ কারণ

যাত্রী ও চালকদের শঙ্কার মধ্যেই হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রায় শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না।

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2023, 01:13 PM
Updated : 16 April 2023, 01:13 PM

ঈদযাত্রায় দেশের অন্যতম ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে নানা শঙ্কা বিরাজ করে। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন অনেকেই।  

এ মহাসড়কে চালক ও নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে যানজটের আশঙ্কার পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।

এ তিন কারণ হলো সড়কে চলমান সংস্কারকাজ, মহাসড়কের পাশে বাজার বসানো ও অবাধে চলা তিন চাকার যানবাহন। 

যদিও হাইওয়ে পুলিশ বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে যাত্রীরা মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করলেও শেষ পর্যন্ত ঈদযাত্রা হয়েছে স্বস্তির।

এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

সব শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে তারা জানান।  

এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলেও তাদের ভাষ্য।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, নিয়মিতভাবে সংস্কার করায় মহাসড়কের কোথাও খানাখন্দ নেই। বর্তমানে কাজ চলমান থাকলেও ঈদযাত্রার আগেই সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেবেন তারা। 

এই মহাসড়কে পরিবহনের চালকরা জানান, মহাসড়কের অন্তত ছয়টি স্থানে বড় বাজার বসানো হয়। এ ছাড়া সংস্কারকাজ চলার কারণে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দি অংশে যানজটের কারণে অনেক সময় এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। এর মধ্যে জেলার দাউদকান্দি উপজেলার টোলপ্লাজা এলাকা, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনার মাধাইয়া, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড ও বুড়িচং উপজেলার নিমসার – এ ছয়টি স্থানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজারেও যানজট হয়। এসব এলাকায় মহাসড়কের ওপর বাজার বসার কারণে গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের।

এ ছাড়া বাজার এলাকায় তিন চাকার বাহনসহ অন্য বাহন মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পণ্যবাহী বাহনও থেমে থাকে। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে তিন চাকার বাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড। যে কারণে এ এলাকাগুলোর উপর দিয়ে যানবাহনকে ধীরগতিতে চলাচল করতে হয়। এতে প্রায়ই থেমে থেমে গাড়ির জট লেগে যায়।

মহাসড়কে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা বলছেন, এই কারণগুলোর বাইরে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্যও যানজট সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পড়া গাড়ি অপসারণ করতে হাইওয়ে পুলিশের অনেক সময় লাগে।

বাসযাত্রী রোকেয়া আক্তার বলেন, “দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কার কাজ করছে সড়ক বিভাগ। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেখছি, কাজের সময় একমুখী লেন বন্ধ থাকে, যার কারণে অন্য লেন দিয়েই দুই দিকের গাড়ি চলাচল করে। এতে গাড়ি ধীরগতিতে চলে সৃষ্টি হয় যানজট।”

কুমিল্লা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের সুপারভাইজার নূরে আলম বলেন, “একবার যানজট লেগে গেলে সেটা সহজে শেষ হয় না। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

“হাইওয়ে পুলিশ বাজারগুলোতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এবং তিন চাকার যান বন্ধ রাখতে পারে আর সড়ক বিভাগ সংস্কারকাজ বন্ধ রাখলে শেষ পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হবে না। তবে চলমান রোজার মধ্যে প্রায় আমাদের যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়তে হয়েছে।”

আবুল কালাম নামে কুমিল্লার এক বাসযাত্রী বলেন, “চলমান গরম আর রোজার মধ্যে প্রায়ই যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। আমরা ঈদের সময় নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে চাই। হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা আরও বেশি দেখতে চাই।”

মহাসড়কে সংস্কারকাজের বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, “মানুষের যেন কষ্ট না হয় এ জন্য আমরা গত এক বছরের বেশি সময় নিয়ে মহাসড়কে সংস্কারকাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাজ এখনও চলছে। সংস্কার কাজের জন্য মানুষের কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে সংস্কার করায় বর্তমানে মহাসড়কের কোথাও কোনো ধরনের খানাখন্দ নেই; যার কারণে মানুষ নিরাপদ চলাচল করতে পারছেন। এ ছাড়া মহাসড়কের যেসব স্থানে বাজার আছে, সেসব স্থানে যান চলাচলে একটু সমস্যা হয়।”

তিনি বলেন, “আমরা এখনও সংস্কারকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ঈদের তিন/চার দিন আগ থেকেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মহাসড়ক এখন খুবই ভালো। চালকরা আইন মেনে গাড়ি চালালে শেষ পর্যন্ত কোনো যানজট হবে না। এইটুকু বলতে পারি – সংস্কারকাজের জন্য ঈদযাত্রায় মানুষের কোনো ভোগান্তি হবে না।”

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ, কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “গত বছরের দুই ঈদেও বলা হয়েছিল যানজট হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে স্বস্তির ঈদযাত্রা করতে পেরেয়ে মানুষ। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে মহাসড়ক সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত। আশা করছি, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া মহাসড়ক এখন সম্পূর্ণ ভালো হওয়ায় নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারছেন চালকরা। আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের বাইরে ভিন্ন পোশাকে মহাসড়কে থাকছে ১০০ জন হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশ সদস্য।”

পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ আরও বলেন, “কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের এলাকা। ঈদযাত্রায় আমরা প্রতিটি স্থানে তৎপর রয়েছি। এরই মধ্যে মহাসড়কে আমাদের ৫৮টি টহল দল ও ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। কোথাও কোনো গাড়ি বিকল হলে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে দ্রুত সেটি অপসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, আমরা যেকোনো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করতে পারব।”