বড়লেখায় খাসিয়াপুঞ্জির পান-সুপারি বাগান কর্তন, তদন্তে অবহেলার অভিযোগ

এ ঘটনায় আল্লাদাত চা বাগানের ম্যানেজারসহ তিনজনের নামোল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 05:37 PM
Updated : 14 May 2023, 05:37 PM

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের তিন হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে এক বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দারা ‘আল্লাদাত চা বাগান’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় অভিযোগ দিলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার দুপুরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর বাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।  

‘বড়লেখা ইন্ডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

গত সোমবার (৮ মে) বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দাদের পক্ষে অলমি খাসিয়া এই অভিযোগ দায়ের করেন।

মানববন্ধনে স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, বড়লেখা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংহতি জানান। এ ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের মালিক অলমি খাসিয়া।

 ‘বড়লেখা ইন্ডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ এর সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মার সঞ্চালনায় স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন মন্টু, নান্টু মারা, রাজেশ পস্না, ইন্ডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রচার সম্পাদক পাইলট মারলিয়া, শিক্ষার্থী স্টেফানিয়া চেল্লা, সন্তোষ পতাম, ওলমি খাসিয়া ও মেলেট খাসিয়া বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দারা বলেন, পান ও সুপারি গাছ কাটার ঘটনার অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রবিউল হক তাদের ‘অসহযোগিতা’ করছেন।

তিনি চা বাগানের লোকজনকে ‘বাঁচানোর’ চেষ্টা করছেন বলে বক্তাদের অভিযোগ।

বড়লেখা ইন্ডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, “জুমে ঢুকে পান ও সুপারি গাছ কাটার পর আমরা থানায় অভিযোগ দেই। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ। কিন্তু তিনি আমাদের অসহযোগিতা করছেন। দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।”

ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের মালিক অলমি খাসিয়া বলেন, “আমরা অসহায় হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। বাগান আমাদের পান ও সুপারি গাছ কেটে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। লোন নিয়ে আমরা জুম করেছিলাম। আমাদের হুমকিও দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা যেন পাই।”

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, “খাসিয়ারা শান্তিপ্রিয়। তাদের জুমের পান ও সুপারি গাছ কাটা চরম অন্যায় হয়েছে। এ রকম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে একের পর এক ঘটনা বাড়বে। এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা সকলেই।”

বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস বলেন, “পান ও সুপারি গাছ কাটায় খাসিয়ারা জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন। এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।”

এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক বলেন, “এখানে অধর্তব্য অপরাধ হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি।”

তবে মৌলভীবাজার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের এপিপি সুবিমল লিন্দকিরি বলেন, “বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমে অনধিকার প্রবেশ করে গাছ কাটার ঘটনায় এফআইআর নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপদান রয়েছে। কিন্তু মামলা না নিয়ে নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের অনুমতি চাওয়াটা রহস্যজনক।”