গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী কিশোর মো. মানিককে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Published : 30 Nov 2023, 08:12 PM
ফেনীতে যুবলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়েছে; আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ আটক করেছে তিনজনকে।
শহরের শাহীন একাডেমি সড়কে বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান।
ফেনী পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জ্যাকি ও সাধারণ সম্পাদক সফিউল্লাহ শুভর অনুসারীদের সঙ্গে যুবলীগ কর্মী সাব্বিরের অনুসারীদের এ সংঘর্ষ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, “জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার পর পরই সাব্বিরসহ তিনজনকে আটক করেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।”
গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী কিশোর মো. মানিককে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মানিক স্থানীয় একটি রড-সিমেন্ট দোকানে কাজ করে। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়। ফেনীতে সে মায়ের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল বলেন, “মানিক নামের এক কিশোরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাতে হাসপাতালে আনা হয়। গুলি তার ডান হাতের কনুইয়ের একদিক দিয়ে ঢুকে আরেকদিক দিয়ে বের হয়ে গেছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি শহিদুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, “শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়াটার ও রামপুর এলাকার ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় একটি হামলার ঘটনায় আসামি হয়ে মো. সাব্বির প্রায় দুইমাস কারাগারে ছিলেন। বুধবার সকালে তিনি জামিনে কারাগার থেকে বের হন। এ জন্য দুপুরে শহরের পুরারাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকায় সাব্বিরের অনুসারীরা শোডাউন করে।
“এ সময় শাহীন একাডেমি এমরান মিয়ার কলোনি সংলগ্ন এলাকায় জ্যাকি ও শুভর অনুসারীদের সঙ্গে সাব্বিরের সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন সাব্বিরের অনুসারী
মানিক গুলিবিদ্ধ ও ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।”
আহত মানিক বলে, “বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে সহিংসতা ঠেকাতে ওয়ার্ড যুবলীগের বড়ভাই জ্যাকি ও শুভর সঙ্গে শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কের এসি মার্কেটের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলাম।
“হঠাৎ খবর আসে সাব্বিরের লোকজন শুভ ভাইয়ের অনুসারীদের মারধর করছে। জ্যাকি ও শুভ ভাইসহ আমরা ১০-১২ জন সেখানে পৌঁছানো মাত্রই সাব্বির আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন গুলি এসে আমার ডান হাতে লাগে।”
যুবলীগ নেতা সফিউল্লাহ শুভ বলেন, “ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় আমার ওপর হামলার অন্যতম আসামি সাব্বির জামিনে মুক্ত হয়ে এসেই আমার ছোট ভাইদের ওপর সশস্ত্র হামলা করেছে। আমার এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি রোডের মাথায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা সফিউল্লাহ শুভর ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় ২৯ সেপ্টেম্বর হামলা করে যুবলীগ কর্মী ‘পিটু বাহিনীর’ সদস্যরা।
এ সময় রেস্তারাঁয় প্রকাশ্যে হামালা চালিয়ে চারজনকে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন শুভ ও তার মামা ওবায়দুল হক।
পরে ‘পিটু বাহিনীর’ প্রধান সাইফুল ইসলাম পিটু ও তার প্রধান সহযোগী যুবলীগ কর্মী সাব্বিরসহ ৩১ জনের নামে মামলা হয়। ওই মামলায় পিটু এখনও কারাগারে রয়েছে।
এদিকে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলছন সাব্বিারের স্ত্রী প্রিয়া। তিনি বলেন, “শুভর ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় ২৯ সেপ্টেম্বর হামলার ঘটনায় আমার স্বামী কোনোভাবেই জড়িত না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
“সে যখন জেলে ছিল, তার জামিনের জন্য আদালতে গেলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আজকে সে যখন জেল থেকে ছাড়া পেল তাকে ষড়যন্ত্র করে আবার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।”