“কাজ করতে গিয়ে হয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে; তবে সহকর্মী ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেসব সমাধান করতে পারব বলে আশা করি।”
Published : 06 Jun 2023, 10:00 PM
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমবারের মতো অফিস করেছেন আজমত উল্লা খান।
মঙ্গলবার কর্মস্থলে যোগ দিলে সহকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান।
আজমত উল্লা খান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, দলীয় পদে থেকেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।
বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাপ করেন আজমত উল্লা।
তিনি বলেন, “আমি নতুন পদে থেকে রাজনীতি করতে পারব কিনা, তা নিয়ে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমি তাদের অনুরোধ করব গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইনটি ভালো করে পড়ে দেখতে। সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে যে রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই।”
এসব প্রপাগান্ডার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আইন জেনেও যদি কেউ এই প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে থাকেন তাহলে বলব, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।”
আজমত বলেন, “গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের ৭ ধারার উপধারা ১ ও ২ অনুযায়ী আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ আইনের ৩ উপধারায় ৬টি উপবিধি আছে। ‘চ’ উপবিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে।”
নতুন পদে যোগ দিয়েই পরিকল্পিতভাবে নগরায়নের কথা জানিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলাকায় যেখানে সেখানে যেন কেউ ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে না পারে, সেই দিকে নজর দেবেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, “ঘরবাড়ি নির্মাণ অবশ্যই হতে হবে পরিকল্পনামাফিক। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে নালা/জলাশয়গুলোকে প্রয়োজনে আবার খনন করে সংরক্ষণ করা হবে। পরিবেশ আইন যেন যথাযথভাবে মেনে চলা হয় তা নিশ্চিত করা হবে।”
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জনবল অপ্রতুল উল্লেখ করে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, “জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। সংস্থার অর্গানোগ্রামের কাজও সমাপ্তির পথে। এটি পাস হয়ে এলে অভিজ্ঞ জনবল নিয়ে আমরা দ্রুত কাজ করতে পারব।”
নগর উন্নয়নের জন্য পরামর্শক ও কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব কমিটির সহায়তায় আমি জনগণের জন্য একটি বাসযোগ্য নগর গঠন করতে চাই। কাজ করতে গিয়ে হয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তবে সহকর্মী ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি তা সমাধান করতে পারব বলে আশা করি।”
প্রথম দিনই সহকর্মীদের সঙ্গে নানা পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে আজমত উল্লা বলেন, “ভূমিকম্প প্রতিরোধের কথা মাথায় রেখে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে।”
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিধি-বিধান মেনেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে, এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না; যোগ করেন তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজয়ের ১০ দিনের মাথায় গত রোববার আজমত উল্লা খানকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০-এর ধারা ৭ (১) ও ৭ (২) অনুযায়ী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খানকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ (তিন) বছর মেয়াদে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো। এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।”
এই সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক আজমত উল্লা খানকে। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান তিনি।
পরাজয়ের কারণ হিসেবে শুরু থেকেই দলের ভেতরে থাকা ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ দায়ী করে আসছেন আজমত উল্লা।
ক্রমবিকাশমান গাজীপুর নগরীকে একটি আধুনিক, সুপরিকল্পিত, শিল্প ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন পাস হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থা গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে।
নাগরিকদের উত্তম সেবাদানের লক্ষ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আটটি জোনের মধ্যে প্রতি দুটি জোন নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি জোন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে জোন এক (টঙ্গী-পুবাইল), জোন দুই (গাছা-জয়দেবপুর), জোন তিন (কাউলতিয়া-বাসন) এবং জোন চার (কোনাবাড়ী-কাশিমপুর)।