“আমরা সরকারের কাছে, জাহাজ কোম্পানির কাছে কৃতজ্ঞ, দ্রুত তাদেরকে মুক্ত করেছে। আমরা সাংবাদিকদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।”
Published : 14 Apr 2024, 05:57 PM
একমাস রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে থাকা সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে তাদের মুক্তির খবরে। এখন প্রিয় মানুষটিকে দেখার অপেক্ষা রয়েছেন তারা।
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি। এর ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৩টার দিকে ৩২দিন পর মুক্তি পায় এমভি আব্দুল্লাহর এর ২৩ নাবিক; এরপর রোববার দুপুর পৌনে ২টায় নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে প্রথম পোস্ট দেন জাহাজটির চিফ অফিসার আতিকউল্লাহ খান।
এমভি আবদুল্লাহ ত্রুু মো. আনোয়ারুল হক রাজুর বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে। রোববার ভোর রাতে ২৩ নাবিকের মুক্তির খবর পান রাজুর পরিবারের সদস্যরা।
এখন তাকে দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন তার মা-বাবা ও বড় ভাইসহ পরিবারের বাকি সদস্যরা।
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার ছেলের মুক্তি পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি গত এক মাস ধরে যে হতাশা আর টেনশনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম, সেটা দূর হয়ে গেছে। আমি এখন খুব স্বস্তিতে আছি।”
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, “আমার ছেলে গত এক মাস জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ছিল; আমি চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কালকে আমার ছেলে যখন ১২টার দিকে ফোন দিয়ে বলে আম্মু আমরা মুক্তি পেয়েছি দোয়া করবেন, তখন থেকে আমি শরীরে শক্তি ফিরে পেয়েছি।
“আমি সবাইকে আমার ছেলের জন্য দোয়া করতে বলেছি, যাতে সে দ্রুত আমার কাছে ফিরে আসে।”
রাজু মুক্তি পাওয়ায় সরকার, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের কর্তপক্ষ, সংবাদমাধ্যম এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তার বড় ভাই জিয়াউল হক রনি।
রনি বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এবং তার কোম্পানি ও সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
“তাদের আপ্রাণ চেষ্টায় আমার ভাই দ্রুত মুক্তি পেয়েছে। সেই সঙ্গে মিডিয়ার লোকজনসহ যারা নিয়মিত আমাদের খোঁজ নিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।”
এদিকে নাবিক আহমদ মোহাম্মদ সালেহের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় তার স্বজনরা। চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে এ নাবিকের সংসার।
সালেহর স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, “আমরা তো খুবই চিন্তার মধ্যে ছিলাম; তার মুক্তি পাওয়ার খবর স্বস্তি দিয়েছে। এখন আমরা শুধু তার বাড়িতে আসার অপেক্ষায় আছি।”
জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলামের মুক্তির খবরে তার পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।
তৌফিক খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার ২০/১ করিমনগর এলাকার ইশবাল হোসেন এবং দিল আফরোজ দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাড়ি থেকে গত ২৫ নভেম্বর জাহাজে গিয়েছিলেন এ নাবিক।
ছেলের মুক্তির খবরে কেমন লাগছে জানতে চাইলে কথার শুরুতে তৌফিকের মা দিল আফরোজ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। তখনও যেন ঘোরের মধ্যে ছিলেন তিনি।
দিল আফরোজ বলেন, “আমার ছেলেসহ ২৩ জন জলদস্যুদের কবল থেকে ছাড়া পেয়েছে; আমাদের আনন্দের শেষ নেই। আমার বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। এখন অপেক্ষায় আছি, দ্রুত তারা ফিরে আসুক।
“তৌফিকের ফেরার খবরে তার স্ত্রী জোবায়দা, দুই সন্তান তাসফিয়া ও রুসাফির মুখে হাসি ফুটেছে; তাদের দেখে আমি খুবই খুশি।”
আফরোজ আরও বলেন, “আমরা সরকারের কাছে, জাহাজ কোম্পানির কাছে কৃতজ্ঞ, দ্রুত তাদেরকে মুক্ত করেছে। আমরা সাংবাদিকদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। তারা সবসময় বিষয়টি নজরে রেখেছে। আমাদের খবর দিয়েছে।”
তৌফিকের স্ত্রী জোবায়দা নোমান বলেছেন, “তৌফিক ভোরে ফোন করেছিল; বলেছে জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন ভালো আছে। আমরা এক মাস ধরে সবাই খুব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলাম, এখন তৌফিকের ফেরার খবরে আমরা খুবই আনন্দিত।
“বেশিক্ষণ কথা হয়নি, কারণ ও তখন ব্যস্ত ছিল। সবকিছু গুছিয়ে পরে আবার কথা বলবে বলে জানিয়েছে। বলেছে চিন্তা করো না, দোয়া করো। দুবাই রওনা দিয়েছি।”
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, “তিনদিন আগে ঈদ গেলেও আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না। এখন তৌফিকের মুক্তির খবরে যেন ঈদ লেগেছে। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ”
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়।
ছিনতাইয়ের নয় দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের। এরপর নানা দেন-দরবার শেষে তারা মুক্তি পেলেন।
মুক্তির পর এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন
জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি
প্রিয়জন জিম্মি সমুদ্রে, তাদের ঈদ আনন্দে শঙ্কা
‘বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে’: নোয়াখালীর জিম্মি নাবিকের বার্তা