সীমান্তবর্তী ওই তিনটি বিলে বৈধ উপায়ে মাছ ধরতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
Published : 28 Oct 2023, 08:23 PM
যশোরের শার্শা উপজেলায় ‘জাল পুড়িয়ে দেওয়ায়’ সীমান্তবর্তী তিনটি বিলে মাছ ধরতে না পেরে ছয় গ্রামের তিন শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ভাষ্য, অবৈধ জাল দিয়ে বিলে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে; তবে বৈধ উপায়ে খেপলা বা ঝাঁকি জাল, আটন বা ঘুনি, ভেসাল, সুতির মোটা ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরতে কোনো অসুবিধা নেই।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আজিজুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছরের মত এবারও দক্ষিণ শার্শার ঠেঙ্গামারী, গোমর ও আওয়ালী বিলের ফসলি জমি ছয় মাস ধরে পানিতে নিমজ্জিত। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
“কিন্তু কোনোরকম সতর্ক না করেই উপজেলা মৎস্য কার্যালয় তাদের মাছ ধরা জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে কয়েকশ পরিবার এখন বেকার হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে তারা দিন পার করছেন।”
কায়বা ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আনিছ উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরের মত চলতি মৌসুমেও ইছামতি নদীর জোয়ারের পানিতে এ ইউনিয়নের রুদ্রপুর, দাউদখালী, কায়বা, ভবানীপুর, পাড়ের কায়বা, বাইকোলা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে কয়েকশ বিঘা জমির ধানের চারা।
এ ছাড়া ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি ঠেঙ্গামারী, গোমর ও আওয়ালী বিলে। বর্ষা মৌসুমে সেখানকার প্রায় ৫০০ একর জমিতে ৫০ বছর ধরে কোনো ফসলের চাষ হয় না। শুধুমাত্র ইরি চাষের ওপরে নির্ভর থাকতে হয় সেখানকার চাষীদের। জলাবদ্ধতার কারণে এ বছরও ৩০০ একর জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়নি।
বছরের অর্ধেক সময় কর্মহীন থাকায় ওই এলাকার মানুষ এক পর্যায়ে মৎস্যজীবীর পথ বেছে নেয় বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
রুদ্রপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৫০) বলেন, “সাধারণ মানুষ ওই তিন বিলে মাছ ধরে সংসার চালায়। কিন্তু এ বছর তাদের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ধরার জাল পুড়িয়ে দিয়েছেন মৎস্য অফিসার। এতে তারা বেকার হয়ে পড়েছেন।”
ভবানীপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩২) বলেন, “বংশ পরম্পরায় আমরা জাল পেতে মাছ ধরে আসছি। এই মাছ বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। এক সময় ‘চোরাকারবারি’ করে এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। আর এখন বৈধ পথে থেকেও বাঁধা।”
কোনো কারণ ছাড়াই মৎস্য কর্মকর্তারা জাল পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন রুদ্রপুর গ্রামের আকবর আলী (৪০), ইসমাইল হোসেন (৫০), শহিদ উদ্দিন (৩০), ভবানীপুরের নজরুল ইসলাম।
তারা জানান, আগে দেশি সুতায় তারা জাল বুনতেন। এখন বাজারে চায়না সুতার জাল কিনতে পাওয়া যায়। এই জাল বিক্রি বন্ধ করলে তো তারা অন্য পদ্ধতিতে মাছ ধরতে পারেন।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন বলেন, “বিষয়টা আমি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তাদের বিধি মোতাবেক মাছ ধরার একটা ব্যবস্থা করা হবে।”
শার্শা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, “আমরা মাছ ধরতে নিষেধ করিনি। তবে পানির প্রবাহ বন্ধ করে পাটাবাঁধ দেওয়া ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
“এ ছাড়া মৎস্য সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী অবৈধ জাল, আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চলাচলে বাধা সৃষ্টি এবং বিষ দিয়ে মাছ ধরা যাবে না।”
এর আগে ৩ জুলাই ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানার বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।