সরিষার হলুদ ফুলে স্বপ্ন দেখছেন শার্শার সাড়ে ৪ হাজার চাষি

চাষিরা উন্নত জাতের সরিষায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

আসাদুজ্জামান আসাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2022, 01:04 PM
Updated : 25 Nov 2022, 01:04 PM

যশোরের শার্শা উপজেলার চাষিরা অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন।  

চলতি মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। 

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার প্রায় চার হাজার ৫০০ কৃষক। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে শার্শার রাজনগর গ্রামের প্রভাত বিশ্বাস, লক্ষ্মণপুরের খামারপাড়া গ্রামের রায়হান গফুর, পাঁচভুলোট গ্রামের আনোয়ার হোসেন, কাগজপুকুর গ্রামের কবির হোসেন এবং গয়ড়া গ্রামের ফারুক হোসেন পাঁচ থেকে ছয় বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন। 

কৃষক প্রভাত বিশ্বাস বলেন, “এ বছর ছয় বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে।” 

আরেক কৃষক রায়হান জানান, স্থানীয় বাজারে গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল, চাহিদাও ছিল বেশি। তাই এবারও সরিষা চাষ করেছেন।

উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকে কৃষক ঝুঁকবেন বলে মনে করছেন এ চাষি। 

কৃষি বিভাগের পরামর্শে পাঁচ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছেন বলে জানান পাঁচভুলোট গ্রামের আনোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, সরিষা ওঠার পর একই জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় এবং চাষে খরচও কম হয়। 

বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, বারি-১৪ জাতের সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর একই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে। তাই কৃষকের আগ্রহও বেশি। 

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মণ্ডল বলেন, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এবার প্রায় ৪,৫০০ কৃষককে সরিষা চাষে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। 

বারি-১৪ সহ অন্যান্য জাতের সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে বোরো আবাদ করতে পারেন বলে কৃষকরা একে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করছেন। 

স্থানীয় বাজারে গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।  

প্রতাপ কুমার আরও বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। এতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে; যেন এ বছর ৭,৮৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা যায়। 

“আগামী বছর ১১ হাজার হেক্টর ও এর পরের বছর ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।” 

এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোজ্য তেলের আমদানি ৮০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার বালা বলেন, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত উপজেলার ৫,৮২০ হেক্টর জমিতে 'বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল আগাম জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা। তবে তারা (চাষি) নাবি জাতের সরিষা চাষের জন্য এখন জমি তৈরি করছেন। যেন লক্ষ্যমাত্রা (৭,৮৮০ হেক্টর) পূরণ করা সম্ভব হয়।

 এ বছর ১,৪২০ হেক্টর বেশি জমিতে আগাম জাতের সরিষা চাষ হয়েছে জানিয়ে তরুণ কুমার বলেন, গত মৌসুমে এ জাতের সরিষা চাষ হয়েছিল ৪,৪০০ হেক্টর জমিতে।