বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সদস্যসহ তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পবর্ত কেওক্রাডংয়ের পাসিং পাড়া থেকে সুসং পাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক থেকে বুধবার তাদের অপহরণ করা হয়।
শুক্রবার বিকালে রুমা থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, “তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তাদের পরিবারের কেউ এখনও পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।”
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ‘ভা তে কুকি’ নামে আইডি থেকে অপহরণের বিষয়ে জানানো হয়েছে। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার হোসেনের ছবি দেওয়া হয়েছে। তবে পেইজটি কারা পরিচালনা করেন তা যাচাই করা যায়নি।
‘ভা তে কুকি’ পেইজে উল্লেখ করা হয়, “আর্মি রিটায়ার্ড অফিসার আনোয়ার হোসেন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) কাছে বন্দি রয়েছে। কম্বিং অপারেশনের নামে নিরীহ জনগণ যতজনকে আটক করা হয়েছে তাদের দ্রুততার সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া না হলে এই রিটায়ার্ড অফিসার আনোয়ার হোসেনকেও ছাড়া হবে না।”
রুমা উপজেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত আর্মি সার্জেন্ট পাসিং পাড়া থেকে সুসং পাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ছিলেন। তার সঙ্গে জিপচালক মামুন ও সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটর এক চালককেও নিয়ে যায়।”
“তবে দুই গাড়ি চালককে শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবার সেখানে তাদেরকে আটকে রাখে। এখন এক্সকেভেটর চালক থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে।”
গত বছর শুরুর দিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে (কেএনএফ) একটি সংগঠন ফেইসবুক পেইজ খুলে প্রচার করা হয়, তারা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, লামা ও আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত কুকি রাজ্য গঠন করতে চায়। যেখানে বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, খিয়াং ও ম্রোরা থাকবে; কিন্তু চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা থাকবে না। পরে সশস্ত্র সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।
গত বছর অক্টোবর মাসে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায় পাহাড়ে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে সশস্ত্র এই সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়।
এরপর অক্টোবর মাস থেকে কেএনএফ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালায় র্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দার শারক্বীয়া’ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ৫৯ জন সদস্য ও তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে ৩৬ জন সদস্য এবং কেএনএফের ১৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে অভিযানের কারনে গত বছর ১৮ অক্টোবর থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে রোয়াংছড়ি ও রুমা এ দুই উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন।
পরবর্তীতে থানচি ও আলীকদম উপজেলাকেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হয়। কয়েক দফা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর পর রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদম উপজেলাকে নিষেধাজ্ঞা তালিকা থেকে তুলে নেওয়া হলেও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: