জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
Published : 01 Jan 2025, 07:18 PM
পাহাড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, ভূমিদখল ও সহিংসতা নিয়ে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস।
মানবাধিকার বিষয়ক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী গোষ্ঠী, বহিরাগত ও ভূমিদস্যুতার কারণে মোট ২০০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। এ সময় ২১ জনকে হত্যা, ১১৯টি বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করা হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত ব্যক্তি ও কোম্পানি এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি পাহাড়ে দুই হাজার ৩১৪ একর ভূমিও দখল করে নিয়েছে।
বুধবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো জনসংহতি সমিতির সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে করা এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামগ্রিক নাজুক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আরও অবনতি ঘটেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। সবচেয়ে নৃশংস ও লোমহর্ষক ঘটনা হল সেপ্টেম্বর মাসে (রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনা) পাহাড়িদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়া।
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মূল স্পিরিট বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করা’ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ‘চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি রাষ্ট্রীয় নীতিমালার কোনো পরিবর্তন হয়নি’ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
“পাহাড়ে দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও ‘অবৈধ অস্ত্রধারী’ আখ্যা দিয়ে ক্রিমিনালাইজ করা হয়। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও পাহাড়ে জনগণ চরম অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক ও নিপাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।”
এ বছর এক হাজার বম পরিবারসহ মোট এক হাজার ৩২১টি পরিবার এবং ৪৭টি বম গ্রামসহ ৯৪টি গ্রামের লোকজন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়।
তার মধ্যে ১৬ জন বমসহ ২০ জনকে হত্যা, ১৪৩ জনকে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো, ২৮ জনকে সাময়িক আটক, ৪২ পরিবারকে জুম ও বাগান চাষে বাধাদান, ২৪২ পরিবারকে সীমান্ত সংযোগ সড়কে ক্ষতি করা এবং ২০টি গ্রামবাসীকে পারিবারিক তথ্য ও ছবি প্রদানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদন আরো বলা হয়, বহিরাগতদের হাতে ১২টি ঘটনায় ১৬ পাহাড়ি নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।
অপহৃত কল্পনা চাকমার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলা হয়, “২০২৪ সালে ২৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটির একটি আদালত আলোচিত কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলাটি খারিজ করার আদেশ দিয়েছে। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মামলাটি চলার পরও প্রশাসন ও বিচার বিভাগ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে না পারার ব্যর্থতা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি এক চরম দৃষ্টান্ত।”