এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নিতে দেরি করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এক এসআই এর বিরুদ্ধে।
Published : 22 Aug 2023, 12:17 AM
ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাত-পা বেঁধে বাসায় এক মাস আটকে রেখে কিশোরী এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নিতে দেরি করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এক এসআই এর বিরুদ্ধে, যা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান।
শুভাঢ্যা ইউনিয়নের গোলামবাজার রোডের ওই বাসার গৃহকর্তা স্বপন ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে রোববার গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ। সোমবার তাদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকমকে জানিয়েছেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শরজিৎ কুমার ঘোষ।
এ দম্পত্তিকে রোববার গ্রেপ্তার করা হলেও জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে ওই থানার একটি দল গত ৮ অগাস্ট রাতে ওই গৃহকর্মীকে স্বপনের নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর অভিযোগ, বাড়িতে দিনের পর দিন বন্দি করে রাখার সময় তার গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেছেন গৃহকর্তা স্বপন ও তার স্ত্রী নাসরিন। তারা শুধু রাতে একবেলা খাবার দিতেন।
ওই গৃহকর্মীর মা জানান, প্রতিবেশীরা প্রায় রাতেই নির্যাতনের কারণে কিশোরীর কান্নার শব্দ শুনতে পেত। তারাই সেদিন (৮ অগাস্ট) খবর দেয়। পরে লোকজনের সহায়তায় ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ এসে তার মেয়েকে উদ্ধার করে।
তিনি জানান, এক বছর আগে ওই বাসায় মেয়েকে কাজে দেন। প্রথম পাঁচ- ছয় মাস খুব ভালো আচরণ করেন। এরপরই শুরু হয় নির্যাতন।
তার অভিযোগ, “মেয়ের উপর নাসরিনের স্বামী স্বপনের কুনজর পরলে সে আমার মেয়েকে কুপ্রস্তার দেয়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্বপন ও তার স্ত্রী আমার মেয়ের হাত-পা বেঁধে এক মাস ধরে একটি কক্ষে তালা দিয়ে বন্দি করে রাখে।”
কিশোরীর মা ৮ অগাস্ট তার মেয়েকে উদ্ধারের নেতৃত্বে থাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ দলের এসআই নাসিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি পরের দিন থানায় অভিযোগ দিতে চাইলেও ওই এসআই তা নেননি। উল্টো অভিযুক্তদের কাছ থেকে ‘টাকা নিয়ে’ আইনি ব্যবস্থার বদলে আপোষ-মীমাংসার প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ তার।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই নাসিরুজ্জামান বলেন, “সেদিন আমি ওই এলাকায় ডিউটিতে ছিলাম। থানার ডিউটি অফিসার আমাকে বিষয়টি জানালে আমি তাৎক্ষনিকভাবে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে জিজ্ঞাসা করি আপনি মামলা করবেন কি না। তখন তিনি আমাকে জানান, ‘আমি-মামলা টামলা কিছু করব না। কোনো ঝামেলায় জড়াব না। শুধু আপনি আমার মেয়েকে উদ্ধার করে দিন’।
“তারপর আমি ফোর্স নিয়ে ওই বাড়ি থেকে তার কিশোরী মেয়েকে উদ্ধার করে তার জিম্মায় দিয়ে দেই এর বেশি কিছু নয়।”
উদ্ধারের সময় কিশোরীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন থাকার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে কোনো নারী পুলিশ সদস্য না থাকায় তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না তা দেখতে পারিনি। আর তার মা তো আমাকে আগেই বলেছিল সে কোনো মামলার ঝামেলায় যাবে না। তাই এতটা গুরুত্ব দেইনি।”
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, অভাবের তাড়নায় ওই কিশোরী ওই দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। তাকে আটকে রেখে ওই দম্পতি মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে নির্যাতন করেছে এটা সত্যিই দুঃখজনক।
“রোববার ঘটনাটি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
এত দেরিতে মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবাদ পেয়ে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেছিল এসআই নাসিরুজ্জামান। কিশোরীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল। এখানে তার অনেক কিছু করার ছিল। কিন্তু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কেন ওই দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সেটি আমার জানা নেই। এমনকি তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে জানাননি। তার দায়িত্বহীনতার কারণেই মামলা নিতে দেরি হয়েছে।
পরে পুরো ঘটনা পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসআই নাসিরুজ্জামান কেন দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।