“মনে রাখবেন দেশের ৫০ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন“, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 28 Sep 2024, 11:25 PM
তৈরি পোশাক শিল্পকে রক্ষায় সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সতর্ক করে বলেছেন, এই শিল্পের ক্ষতি হলে দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকবে না।
সরকারকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “ভোটের মাধ্যমেই সরকার ও সংসদ গঠন করা হোক।”
শনিবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
এক মাসেরও বেশি সময় ধারে পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। তবে কিছু দাবি মানার ঘোষণা দেওয়ার পরও কাটেনি সংকট। শনিবারও সাভারের আশুলিয়ায় ১৬টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “এ শিল্পকে আমাদের রক্ষা করতে হবে সবাই মিলে। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এদের প্রতিহত করুন।
“মনে রাখবেন দেশের ৫০ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। এ খাতকে যদি ক্ষতি করা যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক থাকবে না।”
২০২৩ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের শিল্প কারখানাগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে আমরা কোনো প্রোডাকশন পাচ্ছি না।”
শিল্প রক্ষা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “অনেক কারখানা মালিক নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। সরকারকে অনুরোধ করব, যত দ্রুত সম্ভব যে শিল্প কারখানাগুলো অর্থনীতি রক্ষা করতে অবদান রাখে, তাদেরকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
“আপনারা শ্রমিকদের সাথে, মালিকদের সাথে কথা বলুন, তাদের নিয়েই এ দেশকে রক্ষা করুন।”
‘নেপথ্যে চক্রান্ত’
শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে চক্রান্তের অভিযোগ এনে ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন. কিন্তু তার প্রেতাত্মা এখনও দেশের মধ্যেই আছে। তারা এখন দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে, বিশেষ করে শিল্প এলাকায় ষড়যন্ত্র করছে। তারা ভাবছে ‘যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম, তাহলে আবার ‘চুরি’ করতে পারতাম, ‘লুটপাট’ করতে পারতাম।’
“এ জন্যই তারা দেশের শিল্প কারখানা, বিশেষ করে পোশাক শিল্প ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ খাতের ক্ষতি করতে চায় তারা, যারা জোর করে আবারও বাংলাদেশ লুট করতে পারে।”
এই ‘চক্রান্তে’ ভারতেরও সম্পৃক্ততা আছে দাবি করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “তারা জানে আমাদের শিল্প ধ্বংস হলে তাদের দেশে কাজ চলে যাবে। তারা ভাবে বাংলাদেশের এ খাতকে যদি নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে তাদের দেশের রপ্তানি বাড়বে।
“যারা আমাদের ভালো দেখতে পারে না, তারাই এ কাজটি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর শেখ হাসিনা ওই ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, ভারতেই বসবাস করছে।”
‘কথা পরিষ্কার, সরকার নির্বাচন করতে চাই’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, “ড. ইউনুসকে সারা পৃথিবীর মানুষ শ্রদ্ধা করে। তিনি দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট লোকদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। আমরা তাদের বলেছি, আওয়ামী লীগের ‘জঞ্জাল’ খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর করে একটা পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।
“কথা পরিষ্কার, আমরা ভোট দিতে চাই, ভোট দিয়ে আমরা পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই, আমরা আমাদের সরকার নির্বাচন করতে চাই। আমরা ওই কথাটা বিশ্বাস করি, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’।”
বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশের সমগ্র মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা হাসিনামুক্ত, ‘ফ্যাসিবাদ’ মুক্ত হতে পেরেছি। এখন স্বাধীনতা রক্ষার করার দায়িত্ব আমাদের।”
‘শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতকে চিঠি দিন’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে হাসিনা এখন ভারতে আছেন, সেখানে বসবাস করছেন। আমরা বারবার বলছি, ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি যে, একজন ‘খুনি’, যে ‘গণহত্যা করেছে’, তাকে জায়গা দেবেন না, যে দেশের গণতন্ত্র ‘ধ্বংস করেছে’, ‘গণহত্যার’ আসামি হয়েছে, তাকে জায়গা দেবেন না। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা (ভারত) এ বিষয়ে কিছুই বলেনি।”
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ‘ধ্বংস করে দিয়েছে’ বলেও অভিযোগ আনেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে, গুলি করে, ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে, অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে ‘ভীতির রাজত্বে’ নিয়ে গেছে। এখন আমরা দম ফেলে বাঁচতে পারছি, রাতে আরাম করে শুতে পারছি।”
শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী সামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, হাসান উদ্দিন সরকারও বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে মহানগর ও জেলার শ্রমিক দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন
গণতন্ত্রে ফিরতে দেরি হলে ঢুকে পড়বে 'অন্য ব্যবস্থা', শঙ্কায় ফখরুল
সংস্কার সবচেয়ে বেশি 'ন্যায্য' নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে: রুম
শ্রমিক অসন্তোষ: পোশাক খাতে '১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল'