“এ সরকার সংস্কার চায় এবং আমরাও সংস্কারে বিশ্বাসী। তাই বলে সংস্কারের নামে বেশি সময়ক্ষেপণ করা যাবে না”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 27 Sep 2024, 10:08 PM
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে যে সংস্কারের কথা বলছে, তা নিয়ে ‘সময়ক্ষেপণ’ না করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না ফিরলে অন্য কোনো ব্যবস্থা ঢুকে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ তৈরি করা হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা।
শুক্রবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সভায় এসব কথা বলেন ফখরুল। বিএনপির প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নার শাহের
অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে এই আয়োজনে ফখরুল কথা বলেন জাতীয় রাজনীতির নানা বিষয়ে।
দ্রুত নির্বাচন দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে দিতে দেরি হলে অন্য কোনো ব্যবস্থা যেন ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রশাসনের সব ইউনিটকে দ্রুত সংস্কার করে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযোগী করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, “এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এ সরকার সংস্কার চায় এবং আমরাও সংস্কারে বিশ্বাসী। তাই বলে সংস্কারের নামে বেশি সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।
“আমরা বিশ্বাস করি তাদের কথায়, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে সব ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করে তাকে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাও প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, এসব মামলা প্রত্যাহার করা না হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না।”
নেতাকর্মীরা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ টাকা চায় অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “টাকা না দিতে পারলে ধরে নিয়ে যায়; মামলা দেয়। আমাদের নেতা হান্নান শাহ মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিকবার।”
আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির প্রায় এক হাজার মানুষকে ‘গুম’ করেছে অভিযোগ এনে ফখরুল বলেছেন, “হাজার হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা দেওয়া হয়েছে। তার সরকারের নির্যাতনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারত না।”
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে গেলেও সংকট কাটেনি বলেও সতর্ক করেন তিনি।
দুর্গা পূজার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি
দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ তৈরির আশঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেছেন, “সামনে দুর্গাপূজা। হিন্দু ভাইদের বলতে চাই, আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা যেভাবে আছেন আমরা সবসময় আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
“আপনাদের পূজার ব্যাপারে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজা নিয়ে যেন ব্যাঘাত ঘটতে না পারে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।”
গাজীপুরসহ দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
প্রয়াত বিএনপি নেতা হান্নার শাহের স্মৃতিচারণ করে ফখরুল বলেন, “তিনি ছিলেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মানুষ। সেনাবাহিনীর পোশাক ছিল, ব্রিগেডিয়ার ছিলেন, মনের দিক দিয়ে ছিলেন গণতান্ত্রিক। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন।”
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বেনজির আহমেদ টিটু, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হান্নান শাহর ছেলে রিয়াজুল হান্নানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।