বিএনপি নেতারা বলেন, বিশৃঙ্খলায় দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
Published : 07 Aug 2024, 11:49 PM
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর সারাদেশে অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখা ও মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বুধবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বিভিন্ন বামপন্থি দলের পক্ষ থেকে সিলেটবাসী ও দলীয় কর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
এজন্য সিলেট জেলা, মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিলেটে অবস্থানরত দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যৌথ সভায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও জানমালের ক্ষতি সাধনে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলায় দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বুধবার বিকালে নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই বিশেষ যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সৈয়দ মঈনুদ্দিন সুহেল, কামরুল হাসান শাহিন, নজিবুর রহমান নজিব, অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, মামুনুর রশিদ মামুন, আনোয়ার হোসেন মানিক, অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, আব্দুল আহাদ খান জামাল, মাহবুবুল হক চৌধুরী, শাকিল মোর্শেদ, মকসুদ আহমদ, মাহবুব আলম, অর্জুন ঘোষ, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, আহাদ চৌধুরী শামীম, সুদীপ জ্যোতি এষ, জুবের আহমদ, ফজলে আহসান রাব্বী, দেলোয়ার হোসেন দিনার, মাওলানা নুরুল হক, রায়হান এইচ খাঁন।
সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে অর্জিত বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য কিছু দুর্বৃত্ত সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মানুষের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। এর সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
দলের কোনো নেতাকর্মী এমন কাজে যুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জামায়াত নেতাদের মন্দির-আশ্রম পরিদর্শন, অভয়
জামায়াতে ইসলামীর সিলেটের নেতাকর্মীরা দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নেতৃত্বে দিনভর সিলেট নগরীর মন্দির ও আশ্রম পরিদর্শন করেছেন।
তারা বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ও উপাসনলায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাদের পাশে থাকার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “পূণ্যভুমি সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে জীবনযাপন ও ধর্ম-কর্ম পালন করে আসছে। জামায়াত মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের ইবাদতের অংশ।”
“স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন পরবর্তীতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে আমাদের ঐতিহ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভাইদের জানমাল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সক্রিয় ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রয়োজনে পাহারার ব্যবস্থা নেবে।”
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট অঞ্চল টিম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, মহানগর নায়েবে আমির মাওলানা সোহেল আহমদ, সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, জামায়াত নেতা আব্দুল মুকিত, মুফতি আলী হায়দার, ক্বারি আলাউদ্দিন, মু. আজিজুল ইসলাম, পারভেজ আহমদ, জুনায়েদ আল হাবিব, কাউন্সিলর রিয়াজ মিয়া, সাবেক কাউন্সিলার রাজিক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের দাড়িয়াপাড়া নিম্বার্ক আশ্রম পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন আশ্রমের সভাপতি ডা. বনদ্বীপ লাল দাস, সাধারণ সম্পাদক পদ্ম দাস।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জাজাঙ্গালের মনিপুরী রাজবাড়ী নাট মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন মন্দিরের সভাপতি অজিৎ শর্মা, সাধারণ সম্পাদক রতন দে, উপদেষ্টা কাউন্সিলার সান্তনু দত্ত সন্তু।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণশাসন বৌদ্ধ মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তনানন্দ শ্রীমন, উপাধ্যক্ষ মহানম ভিক্ষু।
কালীবাড়ি মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন মন্দির কমিটির সভাপতি যীশু পাল, সাধারণ সম্পাদক অজয় দেব, সদস্য শিমুল পাল, রিপন ঘোষ, অলক পাল, সঞ্জয় পাল ও বাবু লাল দেব।
সাম্প্রদায়িক হামলা-লুটপাট রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
বৈষম্য বিলোপ, ফ্যাসিবাদী শাসনের ভিত্তি উচ্ছেদ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-লুটতরাজ রুখে দাঁড়ানো, ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার, দুর্নীতির মূল উৎপাটনের দাবি জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার সিলেটের নেতারা।
বুধবার সকাল ১১টায় সিলেট নগরীর আম্বরখানার বাসদ কার্যালয়ে সিপিবি জেলা সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বাসদ সিলেট জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান, সিপিবি সাবেক জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাসদ জেলা সদস্যসচিব প্রণব জ্যোতি পাল, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সদস্য অ্যাডভোকেট রণেন সরকার রনি, বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলা সদস্য সঞ্জয় কান্ত দাশ, সিপিবি জেলা সদস্য অ্যাডভোকেট নিরঞ্জন দাশ খোকন, উদীচী জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের মামুন বেপারি, ছাত্র ইউনিয়নের মনীষা ওয়াহিদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পিনাক রঞ্জন দাস।
সভা শেষে নেতারা রামকৃষ্ণ মিশন, বলরাম জিউর আখড়া, নিম্বার্ক আশ্রমসহ বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন এবং মন্দির কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
সভায় বক্তারা সারাদেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন দেশবাসী ও প্রশাসনের প্রতি ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, শত শত শহীদের রক্তদান ও দীর্ঘ লড়াই ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই। ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের বিজয় ধরে রাখতে সচেতন দেশবাসীকে পাহারাদারের ভূমিকা নেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।