বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনার তদন্ত ‘প্রায় শেষের দিকে’ বলে জানিয়েছেন কমিটির এক সদস্য।
কাজ শুরুর ১১ দিনের মাথায় শনিবার বিকালে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত করতে গিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্রী অনেকেই সঙ্গেই কথা হয়েছে। তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। একটা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সঠিক সময়েরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”
তদন্ত কমিটির সদস্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হযরত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত প্রায় শেষের দিকে।”
২০ মার্চ অষ্টম শ্রেণির ক্লাস রুম রুটিন মাফিক ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের। কিন্তু ওই ছাত্রী ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। পরে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ফেইসবুকে বাদানুবাদ হয়।
ছাত্রীদের অভিযোগ, এর জের ধরে ২১ মার্চ স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে একজন অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এই ঘটনা স্কুলে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রীরা স্কুল থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ করে এবং সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করে।
২৩ মার্চ জেলা প্রশাসক ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেন এবং তাদের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। ওই দিনই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
এ ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চলার মধ্যে ২১ মার্চের অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ফাঁস হয়। এ নিয়ে এখন শহরজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
ছাত্রীরা যে অভিযোগ করেছে, অডিওতে যাদের কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, তাদের কথাবার্তায় সেই ধরনের আলামত শোনা গেছে। যদিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ওই অডিওর কণ্ঠস্বর ও তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
তবে ফাঁস হওয়া অডিওটি তদন্ত কমিটির নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন।
বিষয়টি অবগত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কমিটির সবাই বসব এবং অডিও পর্যবেক্ষণ করব। যদি তদন্তের ক্ষেত্রে ওই অডিওর কথোপকথন আনা প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই আনব।”
তদন্ত কমিটির সদস্য হযরত আলী বলেন, “অডিও প্রকাশের কথা জেনেছি। অডিও কথোপকথনও তদন্তে আনা হবে।”
যখন স্কুলছাত্রীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় তখন সেখানে অন্য অনেকের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী শিক্ষিকা মোবাশ্বেরা বেগম হাসি ও মুসলিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। ফাঁস হওয়া অডিওতে তাদের কণ্ঠস্বর সদৃশ্য কথা শোনা গেছে।
অডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি আমার সঙ্গে কথা বলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আমি অনেক দূরে। তাই বিষয়টি নজরে আসেনি, তবে শুনেছি।”
সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কমিটি আমার কাছ থেকে ওই দিনের ঘটনা শুনেছে। ফাঁস হওয়া অডিও আমিও শুনেছি। সেদিন তো আমি উপস্থিত ছিলাম, যা হয়েছে আমি তদন্ত কমিটিকে বলেছি।“
তিনি আরও বলেন, “প্রধান শিক্ষিকা আমার উপরের পদে। তিনি সেখানে উপস্থিত, উনার সামনে তো এসব কথা থামাতে বলতে পারি না। তাই যতটুকু বলা যায় ততটুকু বলেছি। আর বেশিরভাগ সময় চুপচাপ ছিলাম।“
অডিওর বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষিকা মোবাশ্বেরা বেগম ও মুসলিমা খাতুনকে মোবাইলে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সেদিনের ঘটনার সময় বিচারক ও স্কুলের শিক্ষকরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তিনজন অভিভাবক (যার মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ) এবং দুই ছাত্রী।
এর মধ্যে দুজন অভিভাবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, সেদিনের বৈঠকের কথাবার্তার একটি অংশ এই অডিওতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: