শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সোমবার স্কুলের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবি জানান।
Published : 28 Mar 2023, 01:14 AM
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে তদন্ত কাজ শুরু হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন।
এদিকে, তদন্ত কমিটির কাজ শুরুর দিনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আবার প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের অপসারণের দাবি জানান।
জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেন, এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় সেই বিচারকের শাস্তিমূলক বদলি হয়েছে। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনও সমানভাবে দোষী। তিনি ছিলেন সেখানকার বিচারক। আর সবাই ছিল অভিভাবক। কিন্তু উনি পা ধরতে বাধ্য করেছেন একজন প্রভাবশালীর কারণে। কাজেই প্রথমে তারই অপসারণ হওয়া উচিত ছিল।
প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে স্বপদে রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।
কয়েকজন অনুগত শিক্ষক দিয়ে তিনি অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন উল্লেখ করে তারা এই বিষয়টারও তদন্ত দাবি করেন।
প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন বলেন, “ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে। আমিও তদন্তের অধীনে। তাই কোনো কথা বলতে চাই না।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
কমিটিতে অন্য দুই সদস্য হলেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজা পারভিন এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারক হযরত আলী।
“আমরা আজ থেকেই তদন্তের কাজ শুরু করেছি। ১৫ কার্যাদিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব,” বলেন নিলুফা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আজকেও জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীরা শাস্তি পাবে এমন আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরে যায়।”
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগে গত ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
তখন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, সব শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে কখনোই ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় তার।
এর জেরে স্কুলের একটি ফেইসবুক গ্রুপে সহপাঠীদের সঙ্গে বিচারকের মেয়ের বাদানুবাদ হয়।
পরদিন সকালে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে এসে বিচারক তিন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবককে শিক্ষকের মাধ্যমে ডেকে আনেন। ফেইসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে 'অপমানজনক কথা' বলা হয়েছে দাবি করে সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করার হুমকি দেন তিনি।
এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বিচারকের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসান। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়।
এর প্রতিবাদে স্কুলের সামনের রাস্তায় ঘটনার সম্মানজনক বিচার চেয়ে পরদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।