এ ছাড়া, ‘কারও ভোট কমানোর জন্য নয়’, বরং ‘পরিবর্তনের জন্যে’ই তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন বলেও মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র এ প্রার্থী।
নিজাম উদ্দিন কায়সারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল দিয়ে। ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি, দায়িত্ব্ পালন করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকেরও। এ ছাড়া কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
দলীয় পরিচিতি হারালেও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শুরু থেকেই ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই নেতা। নগর উন্নয়নে ভোটারদের অজস্র প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি বহুবিধ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ঘোষণা করেছেন নির্বাচনী ইশতেহারও।
শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন এই প্রার্থী।
প্রশ্ন: নির্বাচনী প্রচারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। আপনি প্রতিদিন প্রচুর গণসংযোগ করেছেন, ভোটারদের কাছে গেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে আগামীকাল কী হবে, সেটা বলতে পারছি না। ভোটের পরিবেশ বলতে গেলে প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি এই অবস্থা বজায় থাকে তাহলে বিপুল ভোটে পাস করব বলে আশা করছি। চারদিকে পরিবর্তনের ডাক উঠেছে, মানুষ পরিবর্তন চায়।
প্রশ্ন: আগে প্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এবার নিজেই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে এসেছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন মানুষের?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি প্রথমবার। তবে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার দীর্ঘদিনের। আমি নিজেই আমাদের প্রার্থীর পক্ষে জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচন পরিচালনা করেছি। আর সাড়া কেমন পাচ্ছি–সেটা আপনারাই আমার চেয়ে ভালো দেখছেন মাঠের অবস্থা। চারদিকে ঘোড়ার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কারণে আপনি নির্বাচনে এসেছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের কি আপনার সঙ্গে পাচ্ছেন?
প্রশ্ন: আপনার প্রচারে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। তাহলে বিএনপির নির্বাচনে না আসার ব্যাপারটি ‘লোক দেখানো’?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমার দল একটি যৌক্তিক আন্দোলনে থাকার কারণে এই নির্বাচনে আসেনি। আমি দলকে বিতর্কিত করতে চাইনি বলে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এরপরও দল আমার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে আমি মনে করি, বহিষ্কার হওয়ার বিষয়টিও একজন রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক জীবনের অংশ। আমার নির্বাচনের সঙ্গে বিএনপির ‘লোক দেখানোর’ কোনো সম্পর্ক নেই। তবে মানুষ এখন ঘোড়ার মধ্যেই ধানের শীষকে খুঁজে পাচ্ছে।
প্রশ্ন: বিএনপি আপনাকে বহিষ্কার করলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের করেনি, বরং তারা সদ্যঘোষিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এটি কি ‘দ্বৈত আচরণ’?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমি এখন নির্বাচনী কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
প্রশ্ন: আপনার অভিযোগ হচ্ছে, সাবেক মেয়র সাক্কু জনপ্রত্যাশা পূরণে ‘ব্যর্থ’। আরও বলেছেন, সাক্কু ‘আওয়ামী লীগের লোক’। এখন এমপি বাহারের বিরুদ্ধে সাক্কুর অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?
প্রশ্ন: আপনি সাক্কুকে ‘ফেল’ করানোর জন্য মাঠে নেমেছেন বলে কেউ কেউ ‘প্রচার’ করছেন; এর কারণ কী বলে মনে হয়?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: এটা সাক্কুর লোকজনের কাজ। তারাই এসব অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তবে কুমিল্লার মানুষ এগুলো বোঝে। আমি কাউকে ফেল করানোর জন্য নয়; পরিবর্তনের জন্য ভোটের লড়াইয়ে নেমেছি। কুমিল্লার মানুষ এখন পরিবর্তনের দিন গুনছে। এসব অপপ্রচারে এখন লাভ নেই।
প্রশ্ন: আপনি বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিনের নিকটাত্মীয়, এর সুবাদে ভোটের মাঠে বাড়তি কোনো সুবিধা পাবেন বলে মনে হয়?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: তিনি আমাদের পরিবারের অভিভাবক। উনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অনেক ভোটার কাজ করেন। পরিবারের লোক হওয়ায় একটু সুবিধা রয়েছেই ভোটের মাঠে।
প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরও ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা ছাড়েননি, এ নিয়ে আপনার কোনো অভিযোগ আছে?
নিজাম উদ্দিন কায়সার
প্রশ্ন: ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট নিয়ে আপনার কোনো শঙ্কা আছে?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: ইভিএম নিয়ে শুরু থেকেই আমি আপত্তি জানিয়ে আসছি। তবে এরপরও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমি এবং ভোটাররা শঙ্কায় আছে গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা ভোট ডাকাতদের নিয়ে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে তৎপর হতে হবে।
প্রশ্ন: মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আপনি সবচেয়ে তরুণ, এবারে নতুন যুক্ত হওয়া ২২ হাজার তরুণ ভোটার নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: এবারের নির্বাচনে ১০ শতাংশ তরুণ ভোটার। আমি এই নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কুমিল্লাকে নতুন করে গড়তে চাই। যে কুমিল্লার সঙ্গে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির একটা সমন্বয় থাকবে। আর আমি নিজেও তরুণ সমাজের প্রার্থী। এজন্য তাদের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক। তরুণ ভোটারদের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি, আশা করছি তারা আমাকেই বেছে নেবেন। আমি নির্বাচিত হলে ই-কমার্সে উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য কাজ করব। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ওয়াইফাই জোন থাকবে। সেখান থেকে তরুণরা তাদের ই-কমার্সের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তথ্য-প্রযুক্তি, ফ্রি-ল্যান্সিং ও ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত তরুণ উদ্যোক্তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার উদ্যোগ নেব।
প্রশ্ন: ভোট সুষ্ঠু হবে কি হবে না- এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ‘শঙ্কা’ আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
প্রশ্ন: ভোট সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক মেনে নেবেন কি-না?
নিজাম উদ্দিন কায়সার: যদি কুমিল্লার মানুষ বলে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে; আর গণমাধ্যমকর্মীরা যদি তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে- তাহলে ফলাফল যাই হোক মেনে নেব। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঘোড়া বিপুল ভোটে জিতবে।
প্রশ্ন: ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নিজাম উদ্দিন কায়সার: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন