নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় আরেকজনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
Published : 21 Mar 2022, 10:12 AM
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফিন জানান, সোমবার দুপুরে নদীতে তল্লাশির সময় একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
রোববারের ওই ঘটনায় এ নিয়ে মোট আটজনের লাশ উদ্ধার করা গেল। তাদের মধ্যে ছয় জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান।
তিনি বলেন, এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চটির আরও চার আরোহী নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। তাদের সন্ধানে নদীতে দ্বিতীয় দিনের মত তল্লাশি অভিযান চলছে।
সবশেষ উদ্ধার হওয়া নারীর নাম উম্মে খায়রুন ফাতেমা। তিনি সোনারগাঁওয়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
নিখোঁজ চারজন হলেন: মুন্সিগঞ্জের হাতেম আলী, আব্দুল্লাহ আল জাবের, জোবায়ের হোসেন এবং আরোহী নামে সাড়ে তিন বছরের একটি শিশু।
আগের দিন উদ্ধার হওয়া যে ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তারা হলেন: মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর ইসলামপুরের ব্যবসায়ী জয়নাল ভূঁইয়া (৫৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের আরিফা আক্তার (৩৫), তার ছেলে সাফায়েত (১৫ মাস), পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সালমা বেগম (৪০), তার মেয়ে ফাতেমা (৭), মুন্সিগঞ্জ সদরের স্মৃতি (২০)।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের উদ্ধারে নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চে সে সময় অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে নৌপুলিশের ভাষ্য। যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন বেশ কয়েকজন।
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে দুই শিশুসহ ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সন্ধ্যার পর আলোর অভাবে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি স্থগিত রাখা হলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লঞ্চটি টেনে তোলার কাজ শুরু হয়।
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লঞ্চটি টেনে তুলে বন্দর থানার কাশিপুর খালের উত্তর পাড়ে আলামিননগর এলাকায় রাখা হয় বলে বিআইডব্লিউটিএ এর উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান।
তবে লঞ্চের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে নতুন করে কোনো লাশ মেলেনি জানিয়ে আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, স্রোতের কারণে লাশ চলে যেতে পারে।”
এদিকে রূপসী-৯ এর চাপে এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চটি যখন তলিয়ে যাচ্ছিল, কাছের আরেকটি লঞ্চ থেকে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন রাকিব আল রাজু নামে একজন। তিনি ওই ভিডিও ফেইসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
রাকিব আল রাজু পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লঞ্চটি চাপা পড়ার পরও জাহাজের গতি কমাননি চালক।
কয়েক ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে রূপসী-৯ এবং এর মাস্টারকে আটক করে নৌ-পুলিশ।
তবে সোমবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে নৌ পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান জানান।
এ ঘটনা তদন্তে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যারা নম্বর-১৬১১৩।
বিআইডব্লিউটিএর এর উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলায় ৬১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এই হটলাইন চালু করা হয়েছে।
এছাড়া আরও দুটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হল- +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬; মোবাইল- +৮৮০১৯৫৮৬৫৮২১৩।
মিজানুর বলেন, এই লঞ্চ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য এই হটলাইন যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।