“সভায় উপস্থিত সবাই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন; চেষ্টা করে দেখা, কীভাবে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা যায়,” বলেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
Published : 01 Oct 2024, 08:56 PM
কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘাত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ‘সবার সম্মতিতে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা, মিছিল, সভা ও সমাবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অধ্যক্ষের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু উপস্থিতি খুব কম। মিছিল, মিটিং, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার কারণে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে।
“তাই আজকের সভায় এই বিষয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত সবাই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন; চেষ্টা করে দেখা, কীভাবে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা যায়।”
এর আগে শুক্রবার কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘চট্টগ্রাম কলেজের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ও যৌক্তিক দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে প্রথম দফাই হল কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী ওয়াসিমের নামে কলেজের কোনো স্থাপনার নামকরণ এবং তার পরিবারের পুনর্বাসনে কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা রাখা, দ্রুত হল সংস্কার কাজ শেষ করা, যারা পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং জুলাই বিপ্লবে নির্যাতনকারী হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কলেজ প্রশাসনের বহন করা।
সমন্বয়ক জিয়াদ বলেন, “ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে গৃহীত নীতির অধীনে সব সময় আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
“আমরা শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, যা আমরা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।”
২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ইসলামী ছাত্র শিবির হামলা ও ধাওয়া করে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে অভিযোগ করে ছাত্রদল।
সেদিনের ঘটনায় কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল করিম আরিয়ান, শরীফুল ইসলাম আবীর, নাঈম ভূইয়া, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শোয়াইবুল ইসলাম ও আশরাফ নামে পাঁচজন আহত হন বলে দাবি করে বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি।
পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষের বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাফরাশ নুরী বলেন, “সম্প্রতি বেশ কয়েক দফা আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে শিবির। কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফ উদ্দিনকে ছাত্রদল সন্দেহে মারধর করে এবং ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
“পরে এ বিষয়ে আমরা অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে আবারও হামলা হয়।”
২৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে দূরত্ব তৈরি করার জন্য কূটকৌশলের অংশ হিসেবে এবং ছাত্রশিবিরের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
২৬ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার আগেও গত দুই মাসে কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একাধিক বিরোধের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে শিবিরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ ছাত্রদলের
চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের উপর শিবিরের হামলা, সংঘর্ষ-হল বন্ধ