যানজট ও ভোগান্তি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জানুয়ারি নগরের ছয়টি পথে ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
Published : 27 Jan 2025, 08:07 PM
ময়মনসিংহ নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ছয়টি পথে ইজিবাইক চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সিটি করপোরেশন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে নগরীতে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রাখেন চালকরা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকা না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ।
তবে সকাল থেকে ইজিবাইক বন্ধে সাধারণ মানুষের চলাচলে কিছুটা ভোগান্তি হলেও নগরীতে যানজট না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ময়মনসিংহ নগরীতে অনুমোদিত ইজিবাইক সাত হাজার, ব্যাটারিচালিত মোটা ও চিকন তিন চাকার রিকশা ১২ হাজার থাকলেও প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০ হাজার চলাচল করে। এতে যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
যানজট ও ভোগান্তি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জানুয়ারি নগরীর ছয়টি পথে ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
নিষেধাজ্ঞার পর নগরের জিলা স্কুল মোড় থেকে নতুন বাজার হয়ে গাঙ্গিনারপাড়, সি কে ঘোষ রোড, দুর্গাবাড়ি রোড এবং স্বদেশী বাজারে ইজিবাইক চলাচল না করায় এসব এলাকা যানজটমুক্ত হয়। স্বস্তি প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ।
তবে চালকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইজিবাইকে যাত্রী উঠছে না। এর প্রতিবাদে তারা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার বিকালে চালকরা সার্কিট হাউজ মাঠে জড়ো হয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে সোমবার সকাল থেকে নগরীর সব পথে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
সকাল থেকে শহরের ভেতরে ইজিবাইক ও রিকশা যাতে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য চালকরা প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বেলা ৩টার দিকে কয়েকশ চালক সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
তবে যানবাহনের কারণে সাধারণ মানুষকে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে দেখলেও বেশিরভাগ মানুষ ইজিবাইক চলাচলের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
জিলা স্কুল মোড়ের বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, নগরীতে ইজিবাইক চলাচলের কারণে যানজট হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বন্ধ করে দিলে চালকদের যেমন সমস্যা তেমনি সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সুযোগে অন্য রিকশাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। সেগুলো তদারকি করাও দরকার প্রশাসনের।
দুর্গাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, “অপরিকল্পিত নগরী হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় যত সমস্যা হচ্ছে। গেল কয়েকদিন ধরে গাঙ্গিনারপাড়য় ইজিবাইক ঢুকতে না পারায় কোনো যানজট নেই। আমরা চাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকুক।”
ইজিবাইক চালক হাসান মিয়া বলেন, “লাইসেন্স নিয়েছি পুরো নগরীতে চলাচল করার জন্য, কোনও নির্দিষ্ট পথে নয়। লাইসেন্স দেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষকে ভাবা উচিৎ ছিল।
“হঠাৎ চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যানজট কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়ব না আমরা।”
আরেক চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “নগরীতে ইজিবাইক চলাচল করতে না পারলে বালবাচ্চা নিয়ে তাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
“আমাদের পেটে লাথি দিয়ে কার লাভ? কেন আমাদের নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। আন্দোলন নয়, ইজিবাইক চালিয়ে বাঁচতে চাই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।”
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইজিবাইক চালকদের কারণে নগরীতে যেন কোনো ভোগান্তির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রশাসন কাজ করেছে। বিকাল থেকে চালকরা সিটি করপোরেশন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেখানে নজরদারি রয়েছে পুলিশের।
সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে নগরের ছয়টি পথে ইজিবাইক চলাচলে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এরপর থেকে চালকরা বিক্ষোভের পাশাপাশি স্মারকলিপি দিয়েছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।