ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে ২২ অগাস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ বাঁধটি ভেঙে পড়ে।
Published : 25 Oct 2024, 09:32 AM
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর পানির চাপে ভেঙে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাঁধটির মেরামত কাজ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। এক মাস আগে মেরামত কাজ শুরু হলেও এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
বুড়বুড়িয়া এলাকায় অন্তত ১১০ মিটার বাঁধ ভাঙা থাকার কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া থেকে বুড়িচংয়ের কংশনগর পর্যন্ত সড়কটি। এই সড়ক দিয়ে কুমিল্লা শহর থেকে বুড়িচং সদর এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে সহজে চলাচল করা যেত।
এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে স্থানীয়দের চলাচল করতে হচ্ছ। যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দ্রুত মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে সড়কটি সচল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে ২২ অগাস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ বাঁধটি ভেঙে পড়ে। এতে তলিয়ে যায় পুরো বুড়িচংসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা। ওই সময় থেকেই প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
আগে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবহন চলাচল করতো। বর্তমানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ থাকায় মানুষকে বিকল্প পথে অনেক দূর ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকার জামাল হোসেন বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওইদিন থেকেই বাঁধটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
ভান্তি এলাকার মোশারফ হোসেন বলেন, “এখানে কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। সড়কটি দিয়ে যানচলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে আছেন এলাকার মানুষসহ সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীরা।”
বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধীরগতিতেই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। হালচাষের ট্রাক্টরে ট্রলি লাগিয়ে গোমতী নদীর চর থেকে মাটি এনে ভেঙে যাওয়া বাঁধের পশ্চিম পাশে ফেলা হচ্ছে। প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চরের মধ্যে খননযন্ত্র (এস্কাভেটর) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এরপর এসব মাটি আনা হচ্ছে ট্রাক্টরে করে।
ভেঙে যাওয়া বাঁধের পাশেই রয়েছে পুরোনো গোমতী নদীর একটি অংশ। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘মরা’ গোমতী নামে পরিচিত। সেখান থেকে ড্রেজিং করে আনা বালু ফেলা হচ্ছে মূল বাঁধের পাশের গর্তগুলোতে। কাজটি তদারকি করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কৃষাণ দত্ত চৌধুরী ওরফে মুন্না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার কৃষাণ দত্ত চৌধুরী বলেন, “প্রায় এক মাস আগে সবকিছু প্রস্তুত করলেও আমরা মূলত কাজটি শুরু করেছি ১৫-২০ দিন আগে। এর মধ্যে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাজ করতে আমাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কাজের গতিতে কিছুটা ধীরগতি থাকার মূল কারণ হচ্ছে- আমাদেরকে গোমতী নদীর চরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে মাটি আনতে হচ্ছে। মূল বাঁধটা মাটি দিয়েই নির্মাণ করতে হবে।
“চরে এখনো পানি ও কাদামাটি, যার কারণে ঠিকভাবে মাটি কাটা ও পারাপার করা যাচ্ছে না। আর মূল বাঁধের পাশে বিশাল আকৃতির কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে মরা গোমতী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আনা বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, সামনে বৃষ্টি না হলে আমরা কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে পারবো বলে আশা করছি। সবমিলিয়ে আশা করছি, ডিসেম্বরের সড়কটি দিয়ে যানচলাচল শুরু করা যাবে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত সময়ে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অবাধে গোমতীর বালু লুট করেছেন। নদীর চরের কৃষি জমির মাটি কেটে চরকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। এসব কারণে এবার ভয়াল রূপ দেখিয়েছে গোমতী নদী।
এবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে এসব কারণও রয়েছে। কারণ নদীর ক্ষতি অনেক বেশি করেছে মাটি ও বালুখেকোরা। এতে পরিবর্তন হয়ে গেছে নদীর গতিপথ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া বলেন, বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াবাসী। এখনো ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দেখলে আঁতকে ওঠেন স্থানীয়রা। তাই জোড়াতালি নয়, শক্ত ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ চায় স্থানীয়রা। সড়কটি দিয়ে যানচলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, “প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণের কাজ চলছে। ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথমদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
“আমরা পরিকল্পনা করেই কাজটি এগিয়ে নিচ্ছি। তাই বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাঁধ মজবুত করেই নির্মাণ করা হচ্ছে।”