“সড়কের বিভিন্ন মোড় বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের খুব উপস্থিতি দেখা গেছে। এটা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।”
Published : 28 Mar 2025, 03:26 PM
যানজট প্রবণ এলাকাগুলোতে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও এবারের ঈদে বাড়ি ফেরার যাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ স্বস্তিতেই পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ।
যাত্রী-চালকরা বলছে, যানবাহনের চাপ বাড়লে বাজার ও টোলপ্লাজাগুলোতে জটলা তৈরি হচ্ছে কিন্তু কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রামের আমজাদের বাজার পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবার যানজটের সম্ভাবনা দেখছে না তারা।
দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার এলাকার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য এবং সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের সুপার খায়রুল আলম।
শুক্রবার দুপুরে চান্দিনা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় ঢাকা থেকে আসা যাত্রী মীর মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে।
এশিয়া ট্রান্সপোর্টের এই যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন। মহাসড়কের চিটাগাং রোড, মদনপুর, সোনারগাঁও এলাকায় যানজটের ভোগান্তি ছিল। ভবের চর এলাকাতেও যানবাহনের চাপ ছিল।
“কিন্তু দাউদকান্দির পর রাস্তা স্বাভাবিক। ইলিয়টগঞ্জ এসে দেখি বালুর ট্রাক পড়ে আছে রাস্তার উপর। পরে ওখান থেকে কোনো রকমে চান্দিনা চলে আসলাম।”
মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে চট্টগ্রাম থেকে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছেন স্টার লাইন পরিবহনের যাত্রী অর্পিতা আলম।
এ শিক্ষার্থী বলেন, “সকল শঙ্কা কাটিয়ে স্বস্তিতেই বাড়ি ফেরা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। সড়কের বিভিন্ন মোড় বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের খুব উপস্থিতি দেখা গেছে। এটা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।”
একই গাড়ির চালক মিহির দেবনাথ জানান, “এইদিকের রাস্তায় যেভাবে পুলিশ সেনাবাহিনী আছে-দুর্ঘটনায় না পড়লে যানজট হবে না। কারণ সেনাবাহিনী চেকপোস্টের কারণে স্ট্যান্ডগুলাতে যানবাহন যত্রতত্র দাঁড়াতে পারছে না। ”
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চৌদ্দগ্রাম বাজার, মিয়াবাজার, সুয়াগাজী বাজার, পদুয়ার বাজার, কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা এবং চান্দিনা এলাকায় কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া গৌরীপুর ও দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকাতেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে সকালে ইলিয়টগঞ্জে একটি ট্রাক উল্টে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজট হলেও পুলিশ-সেনাবাহিনীর তৎপরতায় দ্রুত তা স্বাভাবিক হয়।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেন, সকাল সাড়ে ১১টায় ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেনে একটি বালুবাহী ট্রাক উল্টে যায়।
পুলিশ ট্রাকটি সরিয়ে নিলেও উল্টোপথে আসা যানবাহনের কারণে ওই এলাকায় যানজট নিরসনে বেগ পেতে হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে।
এতে চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজটের সৃষ্টি হলেও দুপুরের মধ্যেই তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কিছু মিনিবাস সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতে গিয়ে এবং বাজারগুলোতে পণ্য ওঠানামায় মাঝে মাঝে অস্থায়ী জটলা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিত থাকলে স্বাভাবিক থাকে এসব এলাকা।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য মতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশের যানজট প্রবণ ১২টি হটস্পট রয়েছে। যেখানে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, মহাসড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা এবং ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারীদের সড়ক পারাপারসহ নানা অনিয়মের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে।
তাই এবার ঈদে এসব অপরাধ দমনে বাড়তি জনবল মোতায়েন করেছে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
কুমিল্লা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১২ বীর ব্যাটালিয়নের মেজর সানিউল আলম বলেন, “সড়কে যানজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে হটস্পটগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া সড়ক আইন ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা অসাধু চালক ও পরিবহনের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন যাত্রায় সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।