হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
Published : 25 Mar 2025, 04:56 PM
ঈদের ছুটি বাড়ানো, চলতি মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে সাভারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সাভারের হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে হেমায়েতপুরের ঋষিপাড়া এলাকার জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা দাবি করেন, এ সময় তাদের কয়েকজন শ্রমিককে পুলিশ আটক করেছে। তারা সহকর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান।
শ্রমিক ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক ঈদের ছুটি দুইদিন বাড়ানো, চলতি মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। এ নিয়ে দফায় দফায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় কোনো সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সোমবার কারখানা ভাঙচুর করে।
পরে কর্তৃপক্ষ কারখানায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও মারামারি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করায় কোম্পানির সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছে।
সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন।
কারখানার কোয়ালিটি শাখার শ্রমিক নীলা আক্তার বলেন, “এই মাসে ছুটি দিলে আমরা পুরো মাসের বেতনটা পাই। সেখানে মালিক পক্ষ বলেছে ২০ দিনের বেতন দেবে এবং আট দিনের ছুটি দেবে। আমরা দাবি করেছি, ২০ দিনের বেতনের সঙ্গে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৪০ ঘণ্টা ওভারটাইমের টাকা এবং ছুটি আরও দুদিন বাড়াইয়া দিতে। প্রয়োজনে আমরা ঈদের পরে এসে দুদিন ছুটির যে ডিউটি সেটি করে দেব। কিন্তু মালিকপক্ষ এতে রাজি না হয়ে ছুটি একদিন বাড়াতে চাইলেও বেতন ২০ দিনেরই দেবে বলে জানায়। এ ঘটনায় কারখানার শ্রমিকরা দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করে।”
আরেক শ্রমিক সুইং অপারেটর ইমরান বলেন, “আমরা মালিক পক্ষের কাছে পুরো মাসের বেতন চেয়েছি কিন্তু মালিক পক্ষ বলছে ২০ দিনের বেতন দেবে। এরপর আমরা বলেছি, ২০ দিনের বেতন দিয়ে ওভারটাইমের টাকা এবং ১০ দিন ছুটি দিতে হবে।
“কিন্তু মালিকপক্ষ আমাদের দাবি না মেনে উল্টো আন্দোলনের ঘটনায় ৬৫০ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করেছে এবং রাতে ছয়জন শ্রমিককে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা ওই ছয় শ্রমিকের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।”
আরেক শ্রমিক শিউলি আক্তার বলেন, “মালিক পক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে বহিরাগত লোকজন দিয়ে কারখানায় লুটপাট ও ক্ষতি করিয়ে আমাদের উপর অভিযোগ তুলছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ আমাদের ডেকে জানায়, আপনারা সবাই বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার সকালে আমরা কারখানার মালিককে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করবো। এরমধ্যে কোনো সমাধান না করেই রাতের বেলা পুলিশ আমাদের ছয়জন শ্রমিককে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের মুক্তির দাবি জানাই।”
শ্রমিকদের আটকের বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা বলেন, “কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে চারজন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। শ্রমিকরা ছয়জন আটকের যে অভিযোগ তুলছে তা সঠিক নয়।”
অভিযোগের বিষয়টিও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে জিন্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়ায় কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।